সেভিংস, বীমা, এসআইপি- কোনটি বেশি সুযোগ-সুবিধা দেয়?
প্রকাশ :
সংশোধিত :
অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে সবাই চায় কিছু অর্থ সঞ্চয় করতে। ব্যাংক, বীমাসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উৎকর্ষতার ফলে এখন প্রাতিষ্ঠানিক উৎসে অর্থ জমা রাখাই সবচেয়ে লাভজনক। কারণ, এতে করে একদিকে যেমন আপনার অর্থ সুরক্ষিত থাকবে, ঠিক তেমনি অর্থের সময়মূল্যের হিসেবে কিছু অতিরিক্ত অর্থ আপনি লাভ হিসেবে পাবেন।
প্রাতিষ্ঠানিক উৎসে অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনেকগুলো মাধ্যম প্রচলিত রয়েছে। নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি সেগুলো থেকে পাওয়া লাভ-ক্ষতির হিসাবও আলাদা আলাদা হয়ে থাকে।
তাই কোন মাধ্যমটি আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত যেটি নির্ধারণ করতে আপনার আর্থিক অবস্থা, পরিবারের সুরক্ষা, ঝুঁকির পরিমাণ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় রাখতে পারেন। কারণ, এটি আপনার জন্য একটি বিনিয়োগ যা অদূর ভবিষ্যতে আপনি এবং আপনার পরিবারের সুরক্ষায় ঢাল হিসেবে কাজ করবে।
এই লেখায় মূলত সেভিংস, বীমা এবং এসআইপি (সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান) উক্ত তিনটি আর্থিক পণ্যের তুলনামূলক সুযোগ-সুবিধার কথা আলোচনা করা হবে। ব্যক্তির আয় এবং তার আর্থিক সামর্থ্যের উপর ভিত্তি করে একজন ব্যক্তি এসব আর্থিক সেবাগুলো গ্রহণ করতে পারেন।
প্রথমে সেভিংস দিয়েই শুরু করা যাক। আমাদের দেশে এই মাধ্যমটির প্রচলন সবচেয়ে বেশি। কেননা, প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ সবাই চায় ব্যাংক কিংবা কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রাখতে। আর তাই তো শহর কিংবা গ্রামাঞ্চল- সর্বত্রই সেভিংসের প্রচলন সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
ব্যাংকে সেভিংসের ক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমেই ঠিক করতে হবে কোন ধরনের হিসাব খোলার মাধ্যমে আপনি আপনার অর্থ জমা রাখবেন সেটি। চলতি হিসাবের ক্ষেত্রে আপনি যেকোনো সময় টাকা জমা কিংবা তোলার সুযোগ পেলেও এখানে আপনি কোনো সুদ পাবেন না।
অন্যদিকে সঞ্চয়ী হিসাবের ক্ষেত্রে আপনি যেকোনো সময় টাকা জমা রাখতে পারবেন ঠিকই, কিন্তু সপ্তাহে সর্বোচ্চ দুইবার টাকা উত্তোলনের সুযোগ পাবেন। এছাড়া এই হিসাবে অল্প পরিমাণে সুদও পাবেন প্রতি মাসে।
কিন্তু আপনি যদি অধিক হারে সুদ পেতে চান তাহলে স্থায়ী হিসাবে টাকা জমা রাখা সবচেয়ে লাভজনক। তবে এতে নির্দিষ্ট সময়ের আগে আপনি জমাকৃত অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন না।
এছাড়া বর্তমানে প্রায় সকল ব্যাংকেই বিভিন্ন ধরনের স্কিম প্রচলিত আছে।
প্রত্যেকটি স্কিমের মেয়াদ এবং সুদের পরিমাণ আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। এছাড়া প্রত্যেকটি ব্যাংকের রয়েছে আলাদা আলাদা স্কিম। তাই স্কিমে হিসাব খোলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যংকের স্কিমের বৈশিষ্ট্য এবং মেয়াদ ও সুদের হার বিবেচনায় নিয়ে কোন স্কিমটি আপনার জন্য সবচেয়ে লাভজনক হবে সেটি ঠিক করতে পারেন।
এছাড়া আপনি অর্থ জমা কিংবা সেভিংসের জন্য ব্যাংকের পাশাপাশি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান অথবা এনজিওতে হিসাব খুলতে পারেন। তবে এনজিওতে হিসাব খোলার ক্ষেত্রে অবশ্যই ঐ প্রতিষ্ঠানটির আইনগত বৈধতা এবং আর্থিক বাজারে এর অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে তারপর আপনার অর্থ জমা রাখবেন। অন্যথায় আপনার কষ্টার্জিত অর্থ বিফলে যেতে পারে।
এবার আসা যাক বীমা প্রসঙ্গে। জীবন বীমা এবং সাধারণ বীমা নামক দুই ধরনের বীমা প্রচলিত রয়েছে যেখানে জীবন বীমা করা হয় অনিশ্চিত ভবিষ্যতে ব্যক্তি কিংবা তার পরিবারের সুরক্ষার জন্য। অন্যদিকে সাধারণ বীমা করা হয় কোনো নির্দিষ্ট দূর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেখানে উক্ত দূর্ঘটনাটি সংঘটিত হলে কেবল তখনই বীমাকারী তার ক্ষতিপূরণ পেয়ে থাকেন।
জীবন বীমার ক্ষেত্রে মেয়াদান্তে বীমাকারী তার প্রদানকৃত প্রিমিয়ামের অর্থসহ আরও অতিরিক্ত কিছু অর্থ লাভ হিসেবে পেয়ে থাকেন। তবে এক্ষেত্রে সুবিধা হলো, মেয়াদ পূর্তির আগে যদি বীমাকারী মারা যায় তাহলে নমিনি সম্পূর্ণ অর্থ পাবেন যেই অর্থ মেয়াদান্তে বীমাকারীর পাওয়ার কথা ছিল। তাই উক্ত দৃষ্টিকোণ থেকে জীবন বীমা কিছু বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
তবে চাইলেই কেউ জীবন বীমা করতে পারে না। বীমাকারী কোম্পানি প্রথমে উক্ত ব্যক্তির বয়স, শারীরিক অবস্থা, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ইত্যাদি বিবেচনা করবেন এবং এরপর যদি বীমা কোম্পানি উক্ত বীমা পলিসিটিকে লাভজনক মনে করেন তখনই কেবল বীমাকারীর নামে হিসাব খোলার অনুমতি পাওয়া যাবে।
এছাড়া সাধারণ বীমার ক্ষেত্রেও কিছু সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। নির্দিষ্ট কিছু দূর্ঘটনার ক্ষেত্রে এই বীমা আপনাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে। তবে সাধারণ বীমা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও, স্বাস্থ্য বীমাও কিন্তু সাধারণ বীমার অন্তর্ভুক্ত যা একজন সাধারণ ব্যক্তিও গ্রহণ করতে পারেন। স্বাস্থ্য বীমার ক্ষেত্রে অসুস্থতাজনিত সময়ে বীমা কোম্পানি থেকে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা লাভ করা যায়।
এবার আলোচনা করা যাক এসআইপি কিংবা সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান সম্পর্কে। এটি মূলত একটি মিউচুয়াল ফান্ড যেখানে একজন ব্যক্তি কিস্তিতে অর্থ প্রদানের সুযোগ পেয়ে থাকেন। নির্দিষ্ট সময় পরপর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমাদানের সুযোগ রয়েছে এসআইপিতে যেখানে উক্ত অর্থ শেয়ার বাজার বা মূলধন বাজারে বিনিয়োগ করতে পারে।
এসআইপিতে কিস্তি পরিশোধের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি মূলধন বাজারে বিনিয়োগের অংশ হতে পারেন। এছাড়া এর মাধ্যমে আর্থিকভাবেও লাভবান হওয়া সম্ভব। এসআইপি বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের কাছে ধীরে ধীরে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে।
এসব বিষয়ে আরও জানতে কথা হয় আইপেজ গ্লোবাল লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট (ফাইন্যান্স) মোরশেদ আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, "বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তিগত আর্থিক পরিকল্পনার জন্য এসআইপি (সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান) দীর্ঘমেয়াদে বেশি লাভজনক হতে পারে, কারণ এটি মিউচুয়াল ফান্ড বা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে উচ্চ রিটার্নের সুযোগ দেয়। এর মাধ্যমে চক্রবৃদ্ধি সুদের সুবিধা এবং বাজার বৃদ্ধির সুযোগ নেওয়া যায়, যা সম্পদ গঠনের জন্য উপযুক্ত।"
বর্তমানে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের মাধ্যম প্রচলিত রয়েছে। তবে ব্যক্তিভেদে উক্ত মাধ্যমগুলোর উপযোগিতা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই ব্যক্তির আয় এবং বাজার বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে কোথায় অর্থ জমা রাখতে হবে সেটি ঠিক করতে হবে।