কাশ্মীর সীমান্তে ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি, নতুন করে উত্তেজনা ভারত-পাকিস্তানে

প্রকাশ :
সংশোধিত :

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কাশ্মীর সীমান্তে একটি ভারতীয় ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে ইসলামাবাদের রাষ্ট্রীয় রেডিও। মাত্র এক সপ্তাহ আগেই ওই এলাকায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ঘটে যাওয়া ভয়াবহ হামলার পর এই ঘটনা ঘটল।
এএফপি জানায়, ভারতীয় সেনাবাহিনীও জানিয়েছে, টানা পাঁচ রাত ধরে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর দু'পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় চলছে। তবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে গুলি বিনিময় নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারক রেডিও পাকিস্তান জানায়, সেনাবাহিনী মানাওয়ার সেক্টরে সীমান্তবর্তী ভিম্বর এলাকায় নজরদারির সময় একটি ভারতীয় কোয়াডকপ্টার গুলি করে ভূপাতিত করে, যেটিকে তারা নিজেদের আকাশসীমা লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেছে। ঘটনার নির্দিষ্ট সময় জানানো হয়নি এবং নয়াদিল্লির পক্ষ থেকেও কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি।
গত ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরে ২৬ জন নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ভারত ওই হামলার পেছনে পাকিস্তানের মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ তোলে, যা ইসলামাবাদ অস্বীকার করেছে। এর পর থেকেই উভয় দেশ কাশ্মীরে গুলিবিনিময়ে জড়িয়েছে, কূটনৈতিকভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, একে অপরের নাগরিকদের বহিষ্কার করেছে এবং সীমান্ত বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে।
ভারতের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত কুপওয়ারা, বারামুল্লা এবং আখনুর সেক্টরে পাকিস্তানি বাহিনী বিনা উসকানিতে ছোট অস্ত্র দিয়ে গুলি চালিয়েছে। ভারতীয় সৈন্যরা এর ‘উপযুক্ত জবাব’ দিয়েছে বলে জানায়। হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
ভারত মঙ্গলবারকে পাকিস্তানি নাগরিকদের দেশত্যাগের শেষ দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছে।
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, যুদ্ধবাজ বক্তব্য ভবিষ্যতে সরাসরি সামরিক সংঘাতে পরিণত হতে পারে। স্বাধীনতার পর থেকে কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তান বিভক্ত, যদিও উভয় দেশই পুরো অঞ্চলটির মালিকানা দাবি করে।
কাশ্মীরে ১৯৮৯ সাল থেকে স্বাধীনতা অথবা পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার দাবিতে বিদ্রোহ চলছে। ভারতীয় পুলিশ সম্প্রতি লস্কর-ই-তৈয়বা সংশ্লিষ্ট সন্দেহভাজন তিনজন; দুই পাকিস্তানি ও এক ভারতীয়-এর নামে ওয়ান্টেড পোস্টার জারি করেছে এবং তাদের তথ্যের জন্য ২০ লক্ষ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করেছে। খুনের ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের খুঁজে পেতে অভিযানও শুরু হয়েছে।
জাতিসংঘ ভারত ও পাকিস্তানকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। চীনও একইভাবে মঙ্গলবার দুই দেশকে সংযত আচরণ করার অনুরোধ জানিয়েছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেন, "ভারত ও পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দেশ। এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতির জন্য তাদের সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থান অপরিহার্য।"
ইরান ইতোমধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে, আর সৌদি আরব জানিয়েছে, তারা উত্তেজনা হ্রাসে উদ্যোগ নিচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য এ বিষয়ে গুরুত্ব না দিয়ে মন্তব্য করেন, "এই সমস্যা কোনো না কোনোভাবে সমাধান হয়ে যাবে।"

