ভারতে রপ্তানি বেড়েছে ১১ শতাংশ, তবু বাধার মুখে বাণিজ্য

প্রকাশ :

সংশোধিত :

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি ১১.০৫ শতাংশ বেড়ে ১.৭৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা আগের অর্থবছরের (২০২৩-২৪) ১.৫৭ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় রেকর্ড অর্জন। নন-ট্যারিফ বাধা, বন্দরসংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা এবং নীতিগত জটিলতা থাকা সত্ত্বেও এই প্রবৃদ্ধি এসেছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, এই প্রবৃদ্ধি ক্রমবর্ধমান লজিস্টিক ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের স্থিতিশীলতা প্রমাণ করে। তবে রপ্তানিকারকেরা বলছেন, এসব চ্যালেঞ্জ বাজার সম্প্রসারণে ধীরতা আনছে এবং প্রতিযোগিতার সক্ষমতা ক্ষুণ্ন করছে।

তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বেশিরভাগ সময়জুড়েই রপ্তানিতে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসে রপ্তানি ২৩.০৭ শতাংশ বেড়ে ২০২ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়, নভেম্বর মাসে ২৪.১১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১৫৮ মিলিয়ন ডলার, আর ডিসেম্বর মাসে ১৭.৩৮ শতাংশ বেড়ে হয় ১৬১ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

তবে অর্থবছরের শেষ মাস জুনে রপ্তানি ১৮.৬৩ শতাংশ কমে যায়, যার পেছনে মূল কারণ ছিল বন্দরসংক্রান্ত বিধিনিষেধ, পণ্য পরীক্ষার জটিলতা এবং সীমান্তে বিলম্ব।

অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস-কে বলেন, “স্থলবন্দর বন্ধ থাকার কারণে এখন পোশাক রপ্তানির লিড টাইম বেড়ে ১৬ দিন থেকে ৩০ দিনে দাঁড়িয়েছে। ভারতে আমাদের প্রায় ৩০ লাখ ডলারের লাঁজরি রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এই গতি ধরে রাখা সম্ভব নয়।”

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের মার্কেটিং ডিরেক্টর কামরুজ্জামান কামাল বলেন, “আগে সব স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি সম্ভব ছিল, কিন্তু এখন মাত্র কয়েকটি চালু আছে।” তিনি জানান, “আমাদের এখন সমুদ্রবন্দর ও সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর ব্যবহার করতে হচ্ছে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পণ্য পাঠাতে, এতে সময় ও খরচ—দুটোই বাড়ছে।”

তিনি আরও বলেন, পরিবহন ব্যয় ৮-৯ শতাংশ বেড়েছে, যা প্রাণ-এর ভারতে বছরে ৬০ মিলিয়ন ডলারের কৃষিপণ্য রপ্তানিতে প্রভাব ফেলছে। ভারতে কারখানা থাকলেও প্রাণ বাংলাদেশ থেকে জুস, কনফেকশনারি, বিস্কুট ও নুডলসসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে।

তিনি আরও জানান, “এখন প্রতিটি চালান কঠোরভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে, এতে পুরো প্রক্রিয়ায় বিলম্ব ঘটছে। এসব বিধিনিষেধ অব্যাহত থাকলে সামনে রপ্তানি কমে যেতে পারে।”

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে শীর্ষে ছিল পোশাক ও টেক্সটাইল খাত। ইপিবির তথ্য বলছে, পোশাক রপ্তানি ১৭.৩৯ শতাংশ বেড়ে ৬৪৪.২৫ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৫৪৯ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ওভেন গার্মেন্টস থেকে এসেছে ৪২৮.৪৮ মিলিয়ন ডলার এবং নিটওয়্যার থেকে এসেছে ২১৫.৭৭ মিলিয়ন ডলার।

এছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্যের মধ্যে ছিল উদ্ভিজ্জ টেক্সটাইল ফাইবার, পেপার ইয়ার্ন ও এর বোনা কাপড় (১৮৭.৫৩ মিলিয়ন ডলার), জুতা (১১২.৩১ মিলিয়ন ডলার), এবং হোম টেক্সটাইল (১০৭.৮৪ মিলিয়ন ডলার)।

এই প্রবৃদ্ধির মধ্যেও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ভারসাম্য একতরফা রয়ে গেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারত থেকে ৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, আর রপ্তানি করেছে মাত্র ১.৫৭ বিলিয়ন ডলারের, ফলে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭.৪৩ বিলিয়ন ডলার।

এই ঘাটতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে—২০১০-১১ অর্থবছরে যেখানে ছিল ৪ বিলিয়ন ডলার, ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১.৭ বিলিয়ন ডলারে। যদিও গত দুই অর্থবছরে এই ঘাটতি কিছুটা কমেছে।

অর্থবছরের শেষ দিকে ভারত বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর হয়ে পণ্য আমদানিতে নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ১৭ মে ভারত রেডিমেড গার্মেন্টস, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিকজাত পণ্য, কাঠের আসবাবপত্র, সুতা ও এর উপজাত, ফল-স্বাদযুক্ত পানীয়সহ একাধিক পণ্যের প্রবেশে বিধিনিষেধ দেয়।

যদিও সমুদ্রবন্দরগুলো এই পণ্যের জন্য খোলা ছিল, এবং ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে খাদ্যপণ্য যেতে পারছিল, তবুও এসব বাধা বাণিজ্যে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটায়।

 

newsmanjasi@gmail.com

সর্বশেষ খবর