ভালো ভবিষ্যতের ইঙ্গিত ডিসেম্বরের রপ্তানি আয়ে
প্রকাশ :
সংশোধিত :
গত বছরের জুলাইয়ে ব্যাপক গণআন্দোলনের পর সামাজিক-অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে অচলায়তন তৈরি হয়েছিল তারপরও ২০২৩ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের তুলনায় ২০২৪ এর একই সময়ে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি বাংলাদেশের বিদ্যমান রিজার্ভের উপর যে চাপ রয়েছে তা প্রশমনে সহায়ক হবে। গত বৃহস্পতিবারে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো প্রকাশিত উপাত্তের উদ্ধৃতি দিয়ে দ্য ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেস জানিয়েছে, ডিসেম্বর মাসে রপ্তানিতে ১৭ দশমিক ৭২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির উপর ভর করে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ২ হাজার ৪৫৩ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যেখানে আগের অর্থবছরের এই সময়ে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১৭৪ কোটি মার্কিন ডলার। স্বাভাবিকভাবেই, তৈরি পোশাক খাতই বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রপ্তানি খাতে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা এসেছে, তা থেকে অনুমান করা যায় ওই সময়টাতে যদি কোনও রাজনৈতিক সংঘাত না ঘটতো তাহলে রপ্তানি আয় আরো বেশি হতো।
ডিসেম্বর মাসে রপ্তানি খাতের যে সাফল্য তা কিছু নির্দিষ্ট কারণে বিশেষভাবে মূল্যায়িত হওয়ার দাবিদার। ডিসেম্বর মাসের রপ্তানি থেকে অর্জিত আয় ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের যেকোনো মাসের তুলনায় বেশি। এটা নির্দেশ করে গত জুলাই-আগস্ট মাসে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দেশের রপ্তানি খাত নিম্নমুখী হওয়ার যে আশঙ্কা ছিল, তা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাভার গ্রহণ করার পর কমাতে সমর্থ হয়েছে। যে শঙ্কা তৈইর হয়েছিল তা রুখে দিতে অর্থনৈতিক খাতের স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। দেশে স্থিতিশীলতা আনতে সকল অংশীজনের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দরকার।
যদিও আমরা সাম্প্রতিক সময়ে রপ্তানি খাতে সাফল্য অর্জন করেছি, তারপরও একক রপ্তানি খাতের উপর অর্থাৎ তৈরি পোশাক শিল্পের উপর অধিক নির্ভরতা আমাদেরকে নতুন করে ভাবাচ্ছে। দ্য ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিসেম্বর মাসের মোট রপ্তানি আয়ের ৮১ শতাংশ তৈরি পোশাক শিল্প খাত থেকে এসেছে। আর বাকী খাতগুলো থেকে এসেছে ১৯ শতাংশ। দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা যায়, রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ এবং রপ্তানিমুখী বাজারের সম্প্রসারণের অভাবে রপ্তানি আয়ের জন্য শুধু তৈরি পোশাক শিল্পের উপর নির্ভরতা ইতিবাচক নয়। যদিও বর্তমান সময়ের মূল্যায়নে তৈরি পোশাক শিল্প বাদে অন্যান্য খাতগুলোর অবদানও রয়েছে, কিন্তু সার্বিক রপ্তানিতে এদের অবদান এখনও আশানুরূপ নয়। এই পরিস্থিতি রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি নির্দেশ করে।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী শিল্পের ইতিবাচক সাফল্যের পিছেনে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিভিন্ন ফ্যাক্টরের ভূমিকা রয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশ একটি সুপরিচিত নাম। এই খাতের ব্যান্ডিং এর ইমেজ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। এর পাশাপাশি পণ্য বৈচিত্র্যকরণ, মূল্য সংযোজন এবং কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা প্রদানের মতো বিষয়গুলোর উপর এই খাতের রপ্তানি সম্ভাবনা বৃদ্ধি নির্ভর করে। এই ফ্যাক্টরগুলো তৈরি পোশাক শিল্পের উন্নত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে এবং ক্রেতাদের মাঝে টেকসই আস্থা অর্জনে ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প পর্যাপ্ত কাজের ফরমায়েশ পাওয়া সুসময় পার করছে। এখন যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো এই ইতিবাচক ধারাটিকে বজায় রাখা এবং একে আরো মজবুত করা। যাইহোক, রপ্তানি আয়ের জন্য শুধু একটি খাতের উপর অধিক নির্ভরতার প্রবণতা থেকেও আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশের উচিত হবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ পণ্যের বৈচিত্র্যকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয় সেটা সর্বোচ্চ ব্যবহার করা।