অবাধ্য আমলাদের কোনো ছাড় নয়

রিপোর্ট

প্রকাশ :

সংশোধিত :

যখন বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন যখন রাস্তায় ও মিটিংয়ে তাদের নানা দাবি-দাওয়ার পসরা নিয়ে বসেছে, তখন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের একাংশ নিজেদের দাবি নিয়ে একপ্রকার হাঙ্গামা শুরু করেছে। কিন্তু তাদের এই কার্যক্রম ১৯৭৯ সালে প্রণীত এবং বর্তমানে বলবৎ সরকারি কর্মচারী আইনের নীতিবিরুদ্ধ। প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, আমলাদের অনেকে তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে মিটিং ডাকছেন, কিছু সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করছেন যা নিশ্চিতভাবে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য প্রণীত বিধির লঙ্ঘন। নিঃসন্দেহে, সরকারি কর্মকর্তাদের একটা অংশের এমন আচরণ সরকারি কর্মবিধির সম্পূর্ণ বিরুদ্ধ এবং একারণে সরকার তাদের বিরদ্ধে নিয়মশৃঙ্খলা লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ব্যবস্থা নিতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই, সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রাণলয় সদ্য সমাপ্ত বছরের শেষ দিন অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর একটা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, যেখানে তারা বিভিন্ন পদে থাকা ২৬ জন কর্মকর্তাকে সরকারি চাকরির নিয়মবিধি মানার ব্যাপারে সতর্ক করেন। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে নিয়মশৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে এবং ২০১৮ সালে প্রণীত শৃঙ্খলা ও আপিল রুলসের আওতায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তাদের একাংশের এমন অপেশাদারি ও নৈরাজ্যপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরির পেছনে সাহসের রসদ যোগাচ্ছে কারা। ১৯৯৬ সালে সরকারি আমলাদের একাংশ তাদের রাজনৈতিক মদদপুষ্ট জ্যেষ্ঠ আমলাদের দ্বারা ভুলভাবে পরিচালিত হয়ে এবং সে সময়কার যারা বিরোধী দল ছিল তাদের সমর্থনে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বলবত বিধি লঙ্ঘন করে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। পরবর্তীতে, সেই সময়কার বিরোধী শক্তি তারা যখন  ক্ষমতায় আসে তখন ওই আমলাদের পুরস্কৃত করে। আমলাতন্ত্রে রাজনীতির দুষ্টু প্রভাব সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয় সদ্য পতিত হাসিনা সরকারের শাসনামলে। মূলত ১৯৯৬ সালে হাসিনা তার প্রথম শাসনামলেই ১৯৯০ তারা বিরোধী থাকা অবস্থায় যে আমলারা নিয়ম-শৃঙ্খলা লঙ্ঘন করেছিল তাদেরকে ভালো ভালো জায়গায় পদায়িত করেছে। আর আমলাতন্ত্রের এই দূষিত সংস্কৃতি কিছু বর্তমান আমলারা ধারণ করেন এবং এর মাধ্যমে তাদের উদ্দ্যেশ্য হাসিল করতে চান। 

তাদের যে দাবিগুলো রয়েছে সেগুলো তারা প্রকাশ করতেই পারেন, তবে সেটা আদর্শ চ্যানেল মেনে। কিন্তু নিয়ম ভেঙ্গে দাবি-দাওয়া উপস্থাপন বিগত সরকারের শাসনামলের মতোই সরকার প্রধান কর্তৃক আমলাতন্ত্রের সুগঠিত নিয়ম ভেঙ্গে যাচ্ছেতাই ভাবে প্রশাসনকে পরিচালনা করার যে বাজে পদ্ধতি ছিল সেটিকেই নির্দেশ করে। আর এই ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্রকে এমনভাবে গঠন করা হয়, যাতে তারা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক প্রভাবশালীদেরকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরিতে সহায়তা করতে পারে, একতরফা নির্বাচন সংঘটনে ভূমিকা রাখে এবং তোষণবাদী কর্পোরেটদের সাথে মিলে জণগণের সম্পদ এমনকি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানকেও লুট করতে পারে। 

আমলাতমন্ত্রের যে সদস্যরা বর্তমানে গোলযোগ পাকাচ্ছেন আশঙ্কা করা যায়, তারা মাত্রাহীন দুর্নীতির সাথে অতীতে যুক্ত ছিল এবং বর্তমান সরকারের কাছেও হয়তো তাদের দুরভিসন্ধি পূরণের আশ্বাস চাচ্ছেন। প্রাসঙ্গিকভাবেই, আমলাতন্ত্রের যে অসাধু কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে কাজ সম্পাদন করছিলেন তারা বর্তমান অন্তরবর্তী সরকারের শাসনামলে দুঃসাহস দেখাতে ভয় পাচ্ছেন। খবরে বলা হয়েছে, প্রতিবাদ শুরু হয় যখন প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন সহকারি সচিব পদে পদোন্নতির অনুপাত সংশোধনের প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবে প্রশাসনিক ও অ-প্রশাসনিক ক্যাডারদের সমানুপাতিক হারে ওই পদে পদোন্নতির কথা বলা হয়। আগে এটা অসমানুপাতিক ছিল। কিন্তু প্রতিবাদ করে বা চাপে ফেলে দাবি পূরণে সরকারকে বাধ্য করা  সিভিল সার্ভিস এ্যক্টের বলবৎকৃত ধারার পরিপন্থী। যে কর্মকাণ্ড বিশৃঙ্খলা ও নিয়ম শৃঙ্খলার লঙ্ঘন ঘটায় তার দ্রুত সমাধান করতে হবে। এটা আশা করা যায়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার তাদের অবস্থানে অনড় থাকবে এবং আমলাতন্ত্রের অবাধ্য কর্মকর্তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেবে না। 

সর্বশেষ খবর