ফলন বাম্পার হলেও বাজারে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী
প্রকাশ :
সংশোধিত :
এবছর আমন ধানের একরপ্রতি উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। একরপ্রতি আমন ধানের উৎপাদন বাড়লেও এ বছরে আমন ধানের মোট উৎপাদনের পরিমাণ কত তা পরিমাপ করা একটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা এবার জুলাই-আগস্ট মাসে দেশের একটা বড় অঞ্চল বেশ কয়েকটি বন্যার কবলে পড়ছে এবং বন্যা কবলিত এলাকার ফসলি ক্ষেত এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যদিও বন্যার আগে থেকেই বাজারে চালের দামের ঊর্ধ্বগতি বিরাজ করছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমন ও বোরো ধানের ভালো ফলন সত্ত্বেও কমছে না। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশের মানুষের প্রধানতম খাবার চালের ঊর্ধ্বমুখী দামের প্রেক্ষাপটে সরকার দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু এরও কোনো সুফল বাজারে নেই। বাজারে চালের যে বিভিন্ন ধরন রয়েছে এগুলোর সবগুলোর দামই ঊর্ধ্বমুখী।
চলতি বছরে আমন ধানের ভালো উৎপাদনের কথা শোনা গেলেও, বাজারে এর কোনো সুফল নেই। কেননা চালের বাজারে চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্যতার নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে না। বিবেকবর্জিত ব্যাপারীদের একটা বড় সিন্ডিকেট এখনও চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে এবং অধিক মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে। দ্ব্যর্থহীনভাবেই বলা যায়, এইরকম পরিস্থিতিতে স্থানীয় বাজারে চালের দামের ঊর্ধ্বগতির ঢেউ বিরাজ করবে। আমরা সদ্য পতিত স্বৈরাচারের শাসনামলে বাজার মনিটরিংয়ের নামে নাটক দেখেছি এবং বিভিন্ন সময়ে চালের ব্যাবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলার পরও বাজার যে অসহনীয় ছিল তাও প্রত্যক্ষ করেছি। চালের দামে ঊর্ধ্বগতির এই অস্বাভাবিকতার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও তাদের মদদপুষ্ট গোষ্ঠীও অনেকাংশে দায়ী। এসকল ক্ষমতাশীল ব্যক্তিরা নিজ দেশের সম্পদ অবৈধ উপায়ে আহরণ করে এবং তা বিদেশে পাচার করে। এসব রাঘববোয়ালদের দুর্নীতি দেখে ব্যাবসায়ীরাও চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে উচ্চতর কর্তৃপক্ষের নির্দেশকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয় এবং চালের বাজারের দাম নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে।
কৃষি উপকরণের ঊর্ধ্বমুখী দাম, শ্রমিকদের উচ্চ মজুরি এবং বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের নানামুখী কর্তৃত্বের কারণ হয়তো খুচরা পর্যায়ে চালের দাম বেড়ে যায়। পতিত স্বৈরাচারের শাসনামলে একটা ধাঁধা প্রচলিত ছিল সেটি হলো তারা সবসময় দাবি করতো দেশে ধান ও চালের ব্যাপক উৎপাদন দেশের মানুষের খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনকে সম্ভবপর করবে। কিন্তু তাদের সময়েই আমরা প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ চাল ও অন্যান্য খাদ্যশস্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে দেখেছি। এটাই নির্দেশ করে তাদের দাবি এবং প্রকৃত উৎপাদনের মধ্যকার বিশাল ফারাক। এটা আরও নির্দেশ করে সদ্য সাবেক সরকারের শাসনমালে জিডিপির প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় ও মুদ্রাস্ফীতির হার পরিমাপে যথেষ্ট উপাত্ত কারসাজি করা হতো। এখন যেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো, প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক পরিমাপ নিশ্চিত করা। পাশাপাশি পতিত হাসিনার শাসনামলে খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণতা নিয়ে যে মিথ প্রচলিত ছিল তা ভেঙ্গে ফেলতে হবে এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য সঠিক পরিমাপ নিশ্চিত করতে হবে।
দেশে বার্ষিক খাদ্যশস্য উৎপাদন তালিকায় বোরো ফসলের পরই আমনের অবস্থান। তাই পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা এবং আমন ধানের উৎপাদনের সাথে সংশ্লিষ্ট কৃষি উপকরণ সরবরাহ সচল রাখতে হবে, যাতে বোরো ধান ও অন্যান্য ফসলের উৎপাদনের সাথে আমন ধানের উৎপাদন তাল মিলিয়ে চলতে পারে। যেসব কারণে চাল ও অন্যন্য প্রধানতম খাদ্যের বাজারমূল্যকে বাড়িয়ে দেয় সেগুলোকে দ্রুত দূর করতে হবে।