দুর্ঘটনা নাকি হত্যা?

রিপোর্ট

প্রকাশ :

সংশোধিত :

এটা কি নিছক একটি দুর্ঘটনা নাকি মানুষের জীবন ও সুরক্ষা নিয়ে ইচ্ছাকৃত উদাসীনতা ও নির্মমতার একটি জলজ্যান্ত উদাহরণ? যদি ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজায় সংঘটিত দুর্ঘটনায় ছয় জনের হৃদয়বিদারক মৃত্য কিছু আকস্মিক কার্যকারণে ঘটে থাকে, তাহলে এ দুর্ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক হলেও হয়তোবা অনিবার্য হিসাবে মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু এ দুর্ঘটনায় একটি দ্রুতগতির যাত্রীবাহী বাস এক্সপ্রসওয়ের টোল প্লাজায় গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ বা ইঞ্জিন বন্ধ না করে সেখানে লাইনে থাকা গাড়ি ও যাত্রীদের সজোরে ধাক্কা মারে। প্রথমে বাসটি একটি প্রাইভেট কারকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় এরপর কারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনে থাকা একটি মোটরবাইককের উপরে উঠে যায়। এতে মুহূর্তেই মোটরবাইকে থাকা একজন শিশু মারা যায়। এছাড়াও আরও আটজন দুর্ঘটনায় আহত হয়। যাদের মধ্যে চারজন হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান আর একজন চিকিৎসধীন অবস্থায় মারা যান। এই দুর্ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ যেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে সেখানে চোখের নিমিষেই একই পরিবারের চারজনসহ ছয়জনের মৃত্য জনগণকে হতবাক করে দিয়েছে। 

এর বাইরেও চলতি মাসের ২০ তারিখ পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এক্সপ্রেসওয়েতে একজন বুয়েট শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এই ঘটনাটিও সড়কে শৃঙ্খলতাহীনতার একটা নির্মম উদাহরণের জন্ম দিয়েছে। এই ঘটনাটি ঘটেছে যখন ভুক্তভোগী মোটরবাইকের পেছনে দুইজনকে নিয়ে ভ্রমণ করায় পুলিশের জেরার সম্মুখীন হয়েছিলেন। যখন তিনি পুলিশের কর্মকর্তার সাথে কথা বলছিলেন তখন পেছন দিক থেকে আসা একটি বেপরোয়া গাড়ি তাকে ধাক্কা মারে। সড়কগুলোতে এমন নিত্যনৈমিত্তিক প্রাণহানির ঘটনা দেশে সড়কপথে চলাচলকারী মানুষের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টিকেই সামনে আনে। 

যেটি আরও বেশি উদ্বেগের সেটি হলো দেশের এক্সপ্রেসওয়েতে ঘন ঘন সংঘটিত দুর্ঘটনা। সরকার জনগণের সড়কপথের চলাচলকে স্বস্তিদায়ক করতে দেশের বিভিন্ন হাইওয়েকে এক্সপ্রেসওয়েতে রূপান্তর করেছে ঠিকই কিন্তু গতি নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ব্যবস্থার অভাব ও ট্রাফিক আইনের যথাযথ কার্যকর নিশ্চিত না হওয়ায় এগুলো মৃত্যফাঁদে পরিণত হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়েতে একটি গাড়ির সর্বোচ্চ গতি নির্ধারণ করা হয়েছে ঘন্টায় ৮০ কিলোমিটার। কিন্তু বেশিরভাগ গাড়ির চালকই গাড়ির গতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার তুলে সড়কে একটা ভয়ের পরিস্থিতির জন্ম দেন। একটি দৈনিক পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে গত ছয় দিনে আটটি পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় সাত জনের মৃত্য হয়েছে এবং ৩০ জনের মতো মানুষ আহত হয়েছেন। 

মাওয়া ও পূর্বাচল দুই জায়গাতেই সংঘটিত দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দেখা গেছে চালকেরা যে শুধু বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়েছেন, তাই নয় তারা দুজনেই মদ্যপ ছিলেন। এর বাইরে বাস দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দেখা যায় বাসের চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে এবং বাসের যথাযথ ফিটনেস পারমিটও ছিল না। এগুলোই বেপরোয়া গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন এবং চালকদের মধ্যে নিয়ম না মানার সংস্কৃতিকে ফুটিয়ে তোলে। আর এমন সুরক্ষাহীন অবস্থার মধ্য দিয়ে গাড়ি চললে তা যাত্রী ও পথচারী উভয়ের জীবনের জন্যই ঝুঁকির কারণ হয়। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন সড়পথকে বিপদসংকুল করার কারণগুলোকে গুরুত্বের সাথে নেওয়া। যেসব অভিযোগ রয়েছে সেগুলোর  আইনি সমাধান করতে হবে এবং যারা দুর্ঘটনা ঘটায় তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

সড়কপথে দুর্ঘটনা থেকে প্রাণ বাঁচাতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে সরকারের জন্য এখনই উপর্যুক্ত সময়। দেশের সড়ক, মহাসড়ক ও এক্সপ্রেসওয়তে যে কাঠামোগত ত্রুটি রয়েছে সেগুলো ঠিক করতে হবে এবং ট্রাফিক আইন দ্ব্যর্থহীনভাবে কার্যকর করতে হবে। বিশৃঙ্খল ও বিপজ্জনক সড়ক পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট মৃত্যুর জন্য বিলাপ করে কোনও লাভ নেই, যদি সড়কগুলোকে নিরাপদ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া না হয়।

সর্বশেষ খবর