কোনো সরকারই নাগরিকদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে না: ঢাকেশ্বরী মন্দিরে প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশ :

সংশোধিত :

দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, কোনও সরকারই নাগরিকদের মৌলিক সাংবিধানিক অধিকার অস্বীকার করার ক্ষমতা রাখে না।

আজ মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে পূজার প্রস্তুতি দেখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, "আমরা সবাই একটি বড় পরিবারের অংশ। সকল নাগরিকের সমান অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।"

অসাম্প্রদায়িক চেতনার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, "অশুভ শক্তিকে পরাজিত করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।"

তিনি জানান, আগামী ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক যাচ্ছেন তিনি। তাই পূজার সময় ঢাকায় না থাকলেও ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এসে শান্তি পেয়েছেন বলে মন্তব্য করেন ইউনূস। 

তিনি আরও বলেন, "আমরা এই দেশের নাগরিক। কারও সঙ্গে বৈষম্য হবে না। নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকুন। মনে রাখবেন, আপনারা এই দেশের নাগরিক এবং সংবিধান অনুযায়ী আপনারা অধিকার ও মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য।"

প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, “আমি ভাবছিলাম, বিদেশে থাকায় এবারের দুর্গাপূজার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হব। তাই এই আনন্দ যেন মিস না করি, সে জন্যই আজ এখানে এসেছি।”

এর আগে গতকাল সোমবার, তিনি সবাইকে পূজা ঘিরে কোনো ষড়যন্ত্রের সুযোগ না দিতে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। ওইদিন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় হিন্দু ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি এবং আগাম শুভেচ্ছা জানান।

এ সময় পূজা উদযাপন পরিষদের বিভিন্ন নেতারা তখন তাকে পূজার সময় মণ্ডপ পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমি সবসময় আপনাদের সঙ্গে দেখা করতে চাই, কিন্তু সুযোগ হয়ে ওঠে না। পূজার এই সময়টায় অন্তত একবার দেখা হয়, কথা হয় এই সুযোগটা পেয়ে আমি আনন্দিত।”

তিনি পূজার প্রস্তুতি ও সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও খোঁজ নেন।

হিন্দু নেতারা জানান, এবার দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে এবং প্রস্তুতিও পুরোদমে চলছে। তারা বলেন, এবারের পূজার আয়োজন নির্বিঘ্ন করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে।

তারা প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান। ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও বিভিন্ন মন্দির পরিদর্শনের বিষয়টিও তারা তুলে ধরেন।

মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, রেল মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্থায়ী দুর্গামন্দিরের জন্য জমি বরাদ্দ একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। তিনি বলেন, “আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আমাদের নিয়মিত খোঁজখবর রেখেছেন। গত বছর পূজায় দুই দিনের ছুটি দিয়েছিলেন, এবারও দিয়েছেন এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ।” 

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, “গত বছর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এসে আপনি বলেছিলেন—‘আমরা সবাই এক পরিবার’। আপনার সেই বার্তা আমাদের খুব অনুপ্রাণিত করেছে।” 

তিনি আরও বলেন, “আমরা এমন একটি দেশ চাই না, যেখানে নিরাপত্তার কড়াকড়ির মধ্যে পূজা করতে হয়। এই প্রথমবার কোনও সরকারপ্রধানের কাছ থেকে এমন কথা শুনেছি। আপনার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে আমরা একমত।”

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এসএন তরুণ দে বলেন, “আপনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আপনার নেতৃত্বে আমরা দেখেছি, কিভাবে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো ঠেকানো যায়। আমরা আশা করি, আপনার নেতৃত্বে সব ধর্ম, বর্ণ ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষ ভালোভাবে বাঁচতে পারবে।”

ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. এএফএম খালিদ হোসেন বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয় সব ধর্মের কল্যাণে কাজ করে। তিনি জানান, কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে বিভিন্ন উপাসনালয়, বিধবা ও এতিমদের সহায়তা করা হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে একটি মন্দির নির্মাণ, অন্য একটি মন্দিরে স্নানাগারের সিঁড়ি নির্মাণের কাজ চলছে।

এ সময় সামাজিক শিক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর