অমর জেলিফিশ: যেভাবে বছরের পর বছর ধরে টিকে থাকে প্রকৃতিতে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

প্রকাশ :

সংশোধিত :

সমুদ্রের রহস্যময় অসংখ্য প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক হলো এক জেলিফিশ। অতি ক্ষুদ্র এই জেলিফিশটিকে সাধারণত “অমর জেলিফিশ” বলা হয়ে থাকে। এই প্রাণীটি এমন এক ক্ষমতার অধিকারী যা পৃথিবীর আর কোনও প্রাণীর নেই। 

এই জেলিফিশের প্রজাতি নিজেকে বারবার তার শৈশব অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে পারে, বার্ধক্যকে আক্ষরিক অর্থেই উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে এরা। জেলিফিশটির আকার খুবই ছোট মাত্র ৪-৫ মিলিমিটার। কিন্তু এই ছোট্ট শরীরেই লুকিয়ে রয়েছে আশ্চর্য ক্ষমতা, প্রকৃতির নিয়মকে উল্টে দেওয়ার শক্তি।

অধিকাংশ প্রাণীর জীবনের গতিপথ একমুখী রেখায় চলে। জন্ম, বেড়ে ওঠা, প্রজনন, তারপর মৃত্যু। কিন্তু এই জেলিফিশ তার পরিণত বয়সে পৌঁছে গেলে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আবার তার কৈশোর বা শিশুবস্থায় ফিরে যেতে পারে।

একবার নয়, একাধিকবারই জেলিফিশটি তা করতে পারে। তাই বয়স যতই বাড়ুক না কেন, এরা বারবার নতুন করে জীবন শুরু করতে পারে, অর্থাৎ কখনোই বার্ধক্য আসে না এদের জীবনে।

এই বিস্ময়কর প্রক্রিয়াটির নাম ট্রান্সডিফারেন্সিয়েশন, যেখানে একটি প্রাপ্তবয়স্ক কোষ নিজেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের কোষে রূপান্তর করতে পারে। এই পদ্ধতিতে প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থান থেকে আবার পলিপ বা শিশু অবস্থায় ফিরে যায়।

প্রাণীটি মাংসাশী। প্রধানত জুপ্ল্যাংক্টন খেয়ে বেঁচে থাকে এরা। এছাড়া অন্যান্য মাছের ডিম এবং ছোট প্রজাতির শামুকজাতীয় প্রানী খেয়েও জীবন ধারণ করে এরা। মুখ দিয়ে খাবার গ্রহণ ও বর্জ্য নিষ্কাশন উভয়ই করে থাকে এই প্রানী। 

এই জেলিফিশ প্রথমবারের মতো ভূমধ্যসাগরে পাওয়া যায়। কিন্তু এখন এটি বিশ্বের নানা সাগরে দেখা যায়, যেমন জাপানের উপকূল ও প্রশান্ত মহাসাগরের নানা অংশ। ধারণা করা হয়, বড় বড় জাহাজের চলাচলের মাধ্যমে এরা ছড়িয়ে পড়েছে।

যদিও এই জেলিফিশগোষ্ঠী সম্পূর্ণ অবিনশ্বর নয়, এরা রোগ, শিকার বা দূষণজনিত কারণে মারা যেতে পারে। বেশিরভাগ জেলিফিশের প্রজাতির মতো এরাও অন্যান্য জেলিফিশের প্রজাতির দ্বারাই শিকার হয়।

এছাড়া টুনা, সোর্ডফিশ, কচ্ছপ এবং পেঙ্গুইনও রয়েছে এদের শিকারীর তালিকায়। আক্ষরিক অর্থে অমর না হলেও এদের জৈবিক অমরত্ব গবেষকদের চরমভাবে আকৃষ্ট করেছে। বিজ্ঞানীরা এদের কোষের পুনর্জন্ম যেভাবে কাজ করে এনিয়ে গবেষণা করছেন।

মানুষের বার্ধক্য প্রক্রিয়া কীভাবে ধীরগতির করা যায় এটিও ভেবে দেখছেন তারা। আমাদের চিকিৎসায় এর প্রয়োগ কী হতে পারে, যেমন ক্যানসার প্রতিরোধ কিংবা বার্ধক্য প্রতিরোধ। এই জেলিফিশের জিনগত গঠন ও রহস্য ভেদ করতে পারলে হয়তো মানুষের জীবনকালও বাড়ানো সম্ভব হবে একদিন।

এটিকে বন্দী অবস্থায় লালন পালন করা বেশ কঠিন। বর্তমানে কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিন কুবোতা নামক একমাত্র বিজ্ঞানী এই জেলিফিশের একটি দলকে দীর্ঘ সময় ধরে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছেন।

জেলিফিশগুলোকে প্রতিদিন পরীক্ষা করে দেখে নিশ্চিত হতে হয় যে তারা তাদের যা খাওয়ানো হচ্ছে তা সঠিকভাবে হজম করতে পারছে কিনা। কুবোতা দুই বছরের মধ্যে তার ল্যাবে জেলিফিশদের মোট ১১ বার পুনর্জন্ম লাভ করতে দেখেছে ।

কুবোতা নিয়মিতভাবে জাপানিজ টেলিভিশনে তার অমর জেলিফিশ সম্পর্কে কথা বলেন। তিনি জেলিফিশগুলো নিয়ে বেশ কয়েকটি গানও রেকর্ড করেছেন, যা প্রায়শই তার অনুষ্ঠানের শেষে গেয়ে শুনান তিনি।

তবে এখনো গবেষণা প্রাথমিক স্তরে। ল্যাবরেটরিতে কৃত্রিমভাবে পালন করা অত্যন্ত কঠিন, এবং এর পুরো জীবনচক্র অত্যন্ত জটিল। তবুও এদের অস্তিত্বই প্রমাণ করে যে প্রকৃতি অনেক সময় আমাদের ধরা-বাঁধা ধারণার বাহিরেও কাজ করে।

samiulhaquesami366@gmail.com

সর্বশেষ খবর