নারী চরিত্রের নামে বিখ্যাত যত বাংলা গান

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

প্রকাশ :

সংশোধিত :

বাংলা ভাষায় এমন অনেক স্মরণীয় গান রয়েছে, যেগুলো তৈরি হয়েছে বিভিন্ন নারীকে উদ্দেশ্য করে। সেসব গানে নারীদের সম্বোধন করা হয়েছে, বলা হয়েছে তাদের গল্প, কিছু কাল্পনিক কিছু হয়তো একেবারেই বাস্তব। চলুন, তেমন কিছু গানের কথা জেনে নেয়া যাক। 

ওরে সালেকা ওরে মালেকা (আজম খান) 

সত্তর দশকের শুরুতেই বাংলায় পপ-রক গান নিয়ে ঝড় তোলেন আজম খান। ১৯৭৩ সালে 'ওরে সালেকা ওরে মালেকা' দিয়ে পুরো বাংলাদেশ কাঁপিয়ে দেন তিনি। গানটির বেজ গিটার ও রিদম এখনও শ্রোতাদের মাঝে উন্মাদনা সৃষ্টি করে। 

পাপড়ি কেন বোঝেনা (আজম খান) 

১৯৮৫ সালে আজম খান বিটিভিতে গানটি গাওয়ার পরপরই এটি তুমুল জনপ্রিয় হয়। এই গানের পাপড়ি কিন্তু বাস্তবের চরিত্র। আজম খান ভালোবাসতেন তাকে, কিন্তু পাপড়ির অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়। 

আজম খান

গানটির সূত্রে পরবর্তীতে পাপড়ির পরিবারের সাথে আজম খানের আবারও যোগাযোগ গড়ে ওঠে, যা আমৃত্যু টিকে থাকে। কখনও কখনও বাস্তবতা হয়ে ওঠে সিনেমার চেয়েও বেশি সিনেম্যাটিক। 

নীলাঞ্জনা (শেখ ইসতিয়াক) 

শেখ ইসতিয়াকের বিখ্যাত বাংলা গান 'নীলাঞ্জনা' কে শোনেনি! 'নীলাঞ্জনা, ওই নীল নীল চোখে চেয়ে দেখো না/ তোমার ওই দুটি চোখে আমি হারিয়ে গেছি/ আমি বোঝাতে তো কিছু পারি না।' - শেখ ইসতিয়াকের এই গানটি ১৯৮৬ সালে রিলিজ হওয়ার পরই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়, যে জনপ্রিয়তা আজও বহমান।

নীলাঞ্জনা (নচিকেতা চক্রবর্তী) 

জীবনমুখী বলে আখ্যায়িত গানের গায়ক নচিকেতারও বিখ্যাত একটি গান আছে 'নীলাঞ্জনা' শিরোনামে। 'হাজার কবিতা বেকার সবই তা, তার কথা কেউ বলে না/ সে প্রথম প্রেম আমার নীলাঞ্জনা।'- এই লাইনগুলো এখনও সংগীতপ্রেমীদের হৃদয়ে ঝড় তোলে। 

রঞ্জনা (অঞ্জন দত্ত) 

'পাড়ায় ঢুকলে ঠ্যাংখোড়া করে দেবো, বলেছে পাড়ার দাদারা/ অন্য পাড়া দিয়ে যাচ্ছি তাই, রঞ্জনা আমি আর আসবো না'- অঞ্জন দত্তের লেখা ও গাওয়া এই গান যেন নব্বই দশকের প্রায় প্রতিটি  প্রেমিকের হৃদয়ের কথা। আর এই গানটিও তাই হয়ে গেছে চিরন্তন। 

নীলা (মাইলস)

নন্দিত ও জনপ্রিয় ব্যান্ড 'মাইলস' এর তুমুল জনপ্রিয় গান 'নীলা।' 'নীলা তুমি কি চাওনা হারাতে ওই নীলিমায়/ যেখানে তোমার আমার প্রেম ছবির মতো জেগে রয়।' - ল্যাটিন জ্যাজের স্বাদে তৈরি হামিন আহমেদের গাওয়া এই গানটি এখনও যেকোনো কনসার্টে ঝড় তোলে। 

নীলা (লাকী আখন্দ)

লাকী আখন্দের প্রথম সেলফ টাইটেলড অ্যালবামে (১৯৮৪) থাকা চমৎকার একটি গান 'নীলা।' 'নীলা, কেন চোখ দুটি আঁখি জলে উঠেছে ভরে'- লাকী আখন্দের অনন্য এক মেলোডিয়াস কম্পোজিশন। তার দারুণ গায়কীরও চমৎকার প্রমাণ এই গান। 

শেখ ইসতিয়াক

নন্দিতা (শেখ ইসতিয়াক)

'নন্দিতা, তোমার কথা আমি ভুলিনি এখনও/ আমার কথা কি তোমার মনে পড়ে কখনো'- শেখ ইসতিয়াকের প্রথম অ্যালবাম 'নন্দিতা'(১৯৮৬)-র টাইটেল গান এটি। মেলো রক এই গানটি এখনও জনপ্রিয়।

মৌসুমী (ফিডব্যাক)

কাওসার আহমেদ চৌধুরীর লেখা 'মৌসুমী' ফিডব্যাকের উল্লাস (১৯৮৭) অ্যালবামের গান। 'মৌসুমী আছি একা এই আমি/ ভুলে অভিমান হও সঙ্গিনী।'- কথাগুলো প্রেমে চিরন্তন। মাকসুদের গাওয়া এই গানটি ফিডব্যাকের সবচেয়ে জনপ্রিয় গানগুলোর একটি। পরবর্তীতে মৌসুমী-২ নামে এর আরেকটি সিক্যুয়েলও করে ফিডব্যাক।

জেমস

অনন্যা (জেমস)

জেমসের প্রথম একক অ্যালবাম 'অনন্যা' (১৯৮৮)-র টাইটেল গান। ওই অ্যালবামের সবচেয়ে জনপ্রিয় গান। 'অনন্যা' শব্দটি গানে একেকেবার একেক ভঙ্গিমায় উচ্চারণ করেছেন জেমস, যা গানটিকে করেছে অনন্য। 

অনন্যা (জুয়েল)

'অনন্যা ফিরে দেখো না/ এই মনে কত জোছনা'- আইয়ুব বাচ্চুর সুরে হাসান আবিদুর রেজা জুয়েলের গাওয়া এই গানটি বাংলা ভাষার সবচেয়ে রোমান্টিক গানগুলোর একটি। জুয়েলের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে জনপ্রিয় গানেরও একটি এই অদ্ভুত সুন্দর মিষ্টি গানটি। 

ময়না (আইয়ুব বাচ্চু)

আইয়ুব বাচ্চুর দ্বিতীয় একক অ্যালবাম 'ময়না' (১৯৮৮) এর টাইটেল গান। প্রেমিকের জন্য রাত জাগা, কবিতার লাইন চুরি করে চিঠি লেখা ময়না এখন অন্য কারও- এ কথাই ওঠে এসেছে দারুণ হিট এই গানে। আইয়ুব বাচ্চুকে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে প্রাথমিক পরিচিতি দিয়েছিল এই গানটিই। 

সুইটি (আর্ক)

আর্ক ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবাম 'তাজমহল' (১৯৯৬) এর ট্রেডমার্ক গান হাসানের গাওয়া 'সুইটি।' 'সুইটি তুমি আর কেঁদো না / অভিমান করো না / দূরে দূরে থেকো না / ঘুম আসে না, ঘুম আসে না'- এখনও অনেকের নির্ঘুম রাতের সাক্ষী হয়। গানটির শুরুর কি বোর্ড (আশিকউজ্জামান টুলু) ও গিটার সলো (রেদওয়ান চৌধুরী পঞ্চম) বাংলা গানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সলো। 

অনামিকা (আজম খান)

'চুপ, চুপ,চুপ অনামিকা চুপ, কথা বলো না / তুমি আমি এখানে কেউ জানে না'- আজম খানের এই গানটি সত্তর দশকের তরুণ-যুবাদের হৃদয়ে ঝড় তুলেছিল। প্রথম প্রেমের অভিসারে প্রেমিকাকে নিয়ে সঙ্গোপনে যাওয়াটা তখনও অনেক সাহসের ব্যাপার। আজম খানের গানটিও তাই চমকপ্রদ।

অতসী (আইয়ুব বাচ্চু)

'অতসী তোমাকে ভালোবাসি/ বড় বেশি, খুব বেশি'- নীরবতা অ্যালবামে প্রিন্স মাহমুদের সুরে আইয়ুব বাচ্চুর এই গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। পরে এটি নাটকেও ব্যবহৃত হয়েছে।

সুস্মিতা (পার্থ বড়ুয়া) 

প্রিন্স মাহমুদের সুরে পার্থ বড়ুয়ার এই গানটি 'এখনো দু'চোখে বন্যা' অ্যালবামের। 'সুস্মিতা, করো ক্ষমা'- লাইনটার মাধ্যমে যেন সম্পর্কের ভুল বোঝাবুঝির অবসান ও ফিরে আসতে চাওয়াটাই তুলে ধরা হয়েছে। গানটি বেশ শ্রুতিমধুর ও ছন্দময়।

কবিতা (জেমস)

'কবিতা তুমি স্বপ্নচারিণী হয়ে খবর নিয়ো না/ এই নিশাচর আমায় ভেবো না সুখের মোহনা'- জুয়েল-বাবুর সুরে জেমসের গাওয়া এই গানটি 'পদ্মপাতার জল' নামেও পরিচিত। তুমুল জনপ্রিয় এই গানটি আজও প্রেমিকরা মেলাতে পারেন নিজের সাথে। জেমসের সবচেয়ে জনপ্রিয় গানগুলোর একটি এটি। 

আইয়ুব বাচ্চু

কবিতা (আইয়ুব বাচ্চু) 

'কবিতা তুমি এখনো রাত হলে কি তারাদের গোনো'- প্রিন্স মাহমুদের সুরে আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া এই গানটি কবিতা নাম নিয়ে করা আরেকটি জনপ্রিয় গান। গানটিতে প্রেমের সফল পরিণয় হয়নি, বরং মুখ্য হয়ে উঠেছে বিরহের সুর। 

মৌমিতা (আইয়ুব বাচ্চু) 

'প্রেম তুমি কি' অ্যালবামের এই গানটি সবার কাছে খুব বেশি পরিচিত নয়। তবে চমৎকার গিটার বাদন গানটিকে উপভোগ্য করেছে। 

মীরা বাঈ (জেমস) 

মারজুক রাসেলের লেখা এই গানটি জেমসের একটি ক্লাসিক গান। প্রখ্যাত বাঈজি মীরা বাঈয়ের রূপ ও নাচের বর্ণনা জেমসের উন্মাতাল কণ্ঠে অন্যমাত্রা পেয়েছে। বহু কনসার্টে শ্রোতাদের রক্তে শিহরণ জাগিয়েছে এই গান। ব্যবহৃত হয়েছে সিনেমাতেও। 

চন্দ্রিমা (হাসান) 

প্রিন্স মাহমুদের মেলোডিয়াস সুরে হাসানের 'চন্দ্রিমা' গানটি খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। 'চন্দ্রিমা এখনো তোমায়, তোমাকেই ভালোবাসি/ চন্দ্রিমা আমার চোখে জল, তোমার ওই মুখে হাসি'- লাইনগুলো অনেকেরই জীবনের সাথে মিলে যেতে পারে।

mahmudnewaz939@gmail.com

সর্বশেষ খবর