মোটিভেশন লেটার যেভাবে লিখবেন

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

প্রকাশ :

সংশোধিত :

বিদেশে বৃত্তি পাওয়ার জন্য অন্যান্য শর্তের মতো মোটিভেশন লেটার লেখাও অপরিহার্য। অসংখ্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে এটি আপনাকে আলাদা করে তুলতে সক্ষম। মোটিভেশন লেটার যেমন আপনার প্রাথমিক পরিচয় হিসেবে ভূমিকা রাখবে, তেমনি আপনার লক্ষ্য পূরণেও অবদান রাখবে। 

সব বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তির আবেদন প্রক্রিয়ায় মোটিভেশন লেটার দরকার হয় না। তবে কোনও কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় শর্তের মধ্যে মোটিভেশন লেটার উল্লেখ থাকলে, এটি মুখোমুখি সাক্ষাৎকারের আগে শিক্ষার্থীর যোগ্যতা উপস্থাপনের গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। এজন্য মোটিভেশন লেটার সম্পর্কে আমাদের ধারণা রাখতে হবে।  

প্রথমে এটির কাঠামো ও বিষয়বস্তু দেখে কিছুটা কঠিন মনে হতে পারে। আপনার অনন্য গুণাবলী উপস্থাপন ও সুযোগ ব্যবহার করার উপায় জানা থাকলে মোটিভেশন লেটার লিখতে বেশ সুবিধা হয়। মোটিভেশন লেটার শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট হিসেবে নয় বরং শিক্ষার্থীর পরিচয়পত্র হিসেবেও কাজ করে।

লেখার উপায় জানার আগে এটির গুরুত্ব বোঝা জরুরি। লেটারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্ব ও অনুপ্রেরণা সম্পর্কে জানতে পারে। উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের পেছনে লক্ষ্য, আগ্রহ, চালিকা শক্তি কী লেখায় তুলে ধরতে হবে। আপনি কেন স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য উপযুক্ত এবং আপনাকে কেন নির্বাচন করা উচিত তা জানাতে হবে। 

আপনি যে একজন আদর্শ প্রার্থী তা সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের কৌশলগত উপস্থাপনার মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে।

মোটিভেশন লেটার লেখার জন্য যা যা জানতে হবে 

ভিন্ন ধরনের ডকুমেন্ট যেমন মোটিভেশন লেটার অন্যান্য নথি থেকে ভিন্ন ধাঁচের। এটি লিখতেও হয় ভিন্নভাবে। পড়ালেখার তহবিল নিশ্চিত করতে এটি ভালো করে গুছিয়ে নিতে হবে। 

ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলা

স্কলারশিপের জন্য মোটিভেশন লেখার ক্ষেত্রে কপি করা যাবে না। তার চেয়ে নিজের মতো সুন্দরভাবে লিখতে পারলে লাভ হবে। সততা উপস্থাপিত হলে আবেদন প্রত্যাখান নাও হতে পারে।  

সুস্পষ্টভাবে লেখা

এটি এমনভাবে লিখতে হবে যেন শ্রোতার সামনে বসে আপনি নিজের সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছেন। পড়ালেখার জন্য নিজের উৎসাহ, স্কলারশিপ কীভাবে লক্ষ্য পূরণ করবে তা প্রদর্শন করতে হবে। 

স্কলারশিপের যথার্থতা লিখুন

সব আবেদনের জন্য একইরকম মোটিভেশন লেটার না লিখে ভিন্নভাবে তথ্য উপস্থাপনের চেষ্টা করতে হবে। স্কলারশিপ প্রোগ্রামের নির্দিষ্ট মান এবং উদ্দেশ্য আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে যেভাবে এগিয়ে দেবে তা লিখতে হবে। 

প্রাসঙ্গিকতা উপস্থাপন করুন

স্কলারশিপের সাথে প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা, কৃতিত্ব এবং দক্ষতার উপর জোর দিন। আপনার সক্ষমতা, উপযুক্ততা নির্দিষ্ট উদাহরণ দিয়ে তুলে ধরতে হবে। 

ব্যক্তিগত গল্প লিখুন

যেসব প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠেছেন সেগুলো লক্ষ্য পূরণে কীভাবে কাজে আসবে তা লিখতে হবে৷ একটি আকর্ষণীয় বর্ণনা দিয়ে লেটার লিখলে অন্যদের থেকে আপনাকে আলাদা করে তুলবে।

স্পষ্ট ও সংক্ষিপ্ত হন

স্পষ্টভাবে, সংক্ষিপ্ত আকারে কী-পয়েন্ট দিয়ে মোটিভেশন লেটার লিখতে হবে। শব্দসীমা মেনে চলতে হবে এবং অপ্রয়োজনীয় বিবরণ এড়িয়ে যেতে হবে। বাক্যগুলো যেন আপনার যোগ্যতা এবং প্রেরণা প্রদর্শনে অবদান রাখে সেদিকে নজর রাখা উচিত।

গবেষণা করুন

বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে আপনার জ্ঞান কতটুকু তা জানান দিন। আপনার আগ্রহের নির্দিষ্ট প্রোগ্রাম, অনুষদ বা উদ্যোগগুলো উল্লেখ করুন।

একাডেমিক অর্জন তুলে ধরুন 

আপনার একাডেমিক কৃতিত্ব নিয়ে কথা বলুন। প্রাসঙ্গিক প্রকল্প, গবেষণা বা কোর্সওয়ার্ক নিয়ে আলোচনা করুন যা অধ্যয়নের নির্বাচিত ক্ষেত্রে আবেগ ও দক্ষতা উল্লেখ করবে।

দুর্বলতা ইতিবাচকভাবে দেখুন

আপনার একাডেমিক বা সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলোতে ঘাটতি থাকলে স্পষ্টভাবে কৌশল অবলম্বন করে লিখুন। কোন চ্যালেঞ্জ থেকে আপনি কী শিখেছেন এবং কীভাবে আপনার সংকল্পকে সত্যিকারে রূপ দিয়েছে তা উপস্থাপন করুন।

ভবিষ্যৎ লক্ষ্য প্রকাশ করুন

স্পষ্টভাবে আপনার ভবিষ্যত লক্ষ্যের রূপরেখা তুলে ধরুন। লিখুন স্কলারশিপের মাধ্যমে তা অর্জনে অবদান রাখার আশা নিয়ে। এতে দূরদর্শিতা এবং সুচিন্তিত পরিকল্পনা প্রদর্শন করবে, সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যবহার করার জন্য আপনার আবেদনকে শক্তিশালী করবে।

প্রুফরিড ও সম্পাদনা করুন

টাইপিং, ব্যাকরণগত ত্রুটি, অতিরিক্ত বাক্যাংশ বাদ দিন। একটি ভালো মোটিভেশন লেটার মনোযোগ ধরে রাখতে ভূমিকা রাখবে।

মোটিভেশন লেটার লেখার কৌশল

কার্যকরভাবে এটি তৈরি করার জন্য স্বকীয়তা বজায় রাখতে হবে। এজন্য একটি সু-সংজ্ঞায়িত কাঠামো মেনে চলা প্রয়োজন। যার মধ্যে রয়েছে;

ভূমিকা

লক্ষ্য এবং স্কলারশিপ চাওয়ার পেছনে আপনার উদ্দেশ্য কী তার জন্য একটি সংক্ষিপ্ত ভূমিকা দিয়ে শুরু করুন। একইরকম লেটার না লিখে আপনার আগ্রহ এমনভাবে লিখুন যাতে কমিটি তা পড়তে উৎসাহী হন।

একাডেমিক এবং পেশাদার প্রোফাইল

আপনার একাডেমিক কৃতিত্ব এবং পেশাদার অভিজ্ঞতা তুলে ধরুন। অর্জিত মাইলফলক উপস্থাপন করে নির্বাচিত ক্ষেত্রের প্রতি আপনার দক্ষতা চিত্রায়ন করুন।

আর্থিক সাহায্যের যৌক্তিকতা

এবার প্রধান অংশে আসুন। আপনার আর্থিক সাহায্য চাওয়ার পেছনে কারণ বলুন। স্কলারশিপ কীভাবে আপনার প্রতিষ্ঠান এবং বৃহত্তর সম্প্রদায়ের জন্য রূপান্তরকারী হবে তার রূপরেখা দিন। 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে তথ্য দিন। স্কলারশিপ সেই সাফল্যের জন্য কীভাবে উপকারে আসবে তা নিয়ে আলোচনায় আসুন। 

উপসংহার

আপনি কেন আর্থিক সাহায্যের জন্য উপযুক্ত প্রার্থী তা পুনরাবৃত্তি করে মূল পয়েন্টগুলো সংক্ষিপ্ত করুন। স্কলারশিপ কীভাবে আপনার লক্ষ্যে কাজে আসবে এবং এটি কীভাবে ইতিবাচক প্রভাবকে সহজতর করতে পারে তার উপর জোর দিয়ে লেখা শেষ করুন।

সর্বশেষ খবর