বিশ্বের প্রথম কার্বন নিরপেক্ষ শিশু আদাভি
প্রকাশ :
সংশোধিত :
ইন্টারনেট জুড়ে কিছুদিন ধরেই একটি শিশুর দুই দাঁত বের করা নিষ্পাপ হাসির ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেকেরই হয়তো নজর কেড়েছে ছবিটি। কে এই শিশু কেনই বা এতো সাড়া ফেলেছে নেট দুনিয়ায়। শিশুটি দক্ষিণ ভারতে জন্ম নেয়া দুই বছর বয়সী আদাভি, যে এশিয়া বুক অব রেকর্ডসে জায়গা করে নিয়েছে পৃথিবীর প্রথম কার্বন নিরপেক্ষ শিশু হিসেবে।
অনেকেই হয়তো কার্বন নিরপেক্ষ শিশু বা কার্বন নিউট্রাল বেবি বিষয়টির সাথে পরিচিত নন। কার্বন নিরপেক্ষ শিশু বা কার্বন নিউট্রাল বেবি বলতে এমন শিশুকে বুঝায় যার সারাজীবনব্যাপী বাতাসে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা শূন্য বললেই চলে। অর্থাৎ, মানুষটি যতদিন বেঁচে থাকবে পৃথিবীকে দূষণমুক্ত রাখবে।
তবে তাদের এই শুদ্ধতম মানুষ হওয়ার পিছনে কিছু সহায়ক বস্তু বা বিষয় কাজ করে। আদাভির ক্ষেত্রে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে গাছ। আদাভির মা বাবা এক্ষেত্রে অত্যন্ত দূরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন।
আদাভির জন্মের আগেই তার মা বাবা তামিলনাড়ুর কৃষকদের সহায়তায় ৬ হাজারের বেশি ফলের গাছ রোপণ করেছেন এবং আদাভির জন্মের দুই বছরের মধ্যে আরও চার লাখ গাছ লাগাতে সক্ষম হয়েছেন তারা। যার ফলে তামিলনাড়ুতে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বয়ায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে।
তাদের এই গাছ লাগানোর উদ্যেশ্যই ছিল আদাভির বেড়ে উঠার সাথেই গাছগুলো বেড়ে উঠবে এবং আদাভির নিঃসরণ করা কার্বন শুষে নিবে এই গাছগুলো। যার মাধ্যমে আদাভি একটি সুন্দর সুস্থ কার্বনমুক্ত পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে।
আদাবির ডাক নাম নোভা। বাবা মা দীনেশ এসপি ও জনগানন্দিনী তাকে নোভা বলেই ডাকেন। বাবা দীনেশ এসপি শুধু গাছ লাগিয়েই তার কাজ বন্ধ রাখেননি, তিনি আইআইটিএম এর চাকরি ছেড়ে দক্ষিণ ভারতে গড়ে তোলেছেন “সীরাখু” নামের একটি এনজিও।
কার্বনমুক্ত ভারত গড়ে তোলাই এই এনজিও-র লক্ষ্য। এছাড়াও তারা বাতাসে কার্বনের নিঃসরণ কমানো ও নিয়ন্ত্রণের জন্য নানা ধরনের জনসচেতনতামূলক কর্মশালার আয়োজন করে থাকে। পাশাপাশি এনজিওটি বনাঞ্চল বৃদ্ধিতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে সকলকে নিয়ে একসাথে কাজ করায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সীরাখুর মূল কথাই হচ্ছে, সুস্থ ও দূষণমুক্ত পৃথিবী প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন সকলের মিলিত ইচ্ছাশক্তি ও কাজের সমন্বয়।
ভারত উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাতাসে কার্বন নিঃসরণ আলোচিত একটি নাম। দেশটিতে গড়ে প্রতি বছরে একজন ব্যক্তি দুই টনের মতো কার্বন নিঃসরণ করে তাদের প্রতিদিনকার নানা কাজের মাধ্যমে।
বাতাসে কার্বনের মাত্রা বৃদ্ধির প্রধান কারণ হচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন, তেল, গ্যাস, কয়লা পোড়ানো। এই জীবাশ্ম জ্বানালি পোড়ানোর ফলে পরিবেশে দেখা দেয় নানা অসঙ্গতি। সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত বিষয়টি হচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। যার ফলে ইতোমধ্যেই পৃথিবীর নানা প্রান্তে দেখা দিয়েছে বরফ গলাসহ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়।
ফলে হুমকিতে রয়েছে ভারত, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলো। তাই বাতাসে কার্বনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও কমিয়ে আনতে এবং একটু সুস্থ পৃথিবী গড়ে তোলতে প্রয়োজন পৃথিবীর সব প্রান্তের মানুষের অংশগ্রহণ ও ইতিবাচক সাড়াপ্রদান।
পৃথিবীতে বসবাসকারী প্রত্যেকটি মানুষের ইচ্ছা এবং তা বাস্তবে রূপান্তর ছাড়া কোনোভাবেই কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনা সম্ভব নয়। তাই আদাভিকে নিয়ে তার মা বাবার এমন চিন্তা ও উদ্যোগ সত্যি প্রশংসার দাবী রাখে এবং এশিয়া বুক অব রেকর্ডের এই স্বীকৃতি সারা পৃথিবীর আরও লক্ষ লক্ষ মানুষকে সুন্দর, সুস্থ কার্বনমুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে আরও বেশি অনুপ্রাণিত করে তুলবে।
নাওশিন মুশতারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
E-mail: [email protected]