বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সুন্দর হাতের লেখার সাথে ভালো ফলাফলের সম্পর্ক রয়েছে কি?

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি
রিপোর্ট

প্রকাশ :

সংশোধিত :

মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, “খারাপ হাতের লেখা একটি অপূর্ণ শিক্ষার লক্ষণ।” মন্তব্যটি করেছিলেন মূলত দক্ষিণ আফ্রিকায় উকিল ও তরুণদের সুনিপুণ হাতের লেখা দেখার পর, অথচ এর আগ পর্যন্ত তিনি কখনও হাতের লেখার সুন্দর হওয়ার তেমন প্রয়োজনবোধ করেননি। 

হাতের লেখার গুরুত্ব সেই চিঠি-আদান-প্রদানের যুগ থেকেই প্রবল। প্রেমিকাদের মন পেতে বেনামী চিঠির জন্য হাতের লেখাই যেমন ছিল মূল অস্ত্র, তেমনি এই হাতের লেখার উপর নির্ভর করে এ পর্যন্ত বহু বড় বড় প্রেমকাহিনী মজেছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে রচিত গল্পগুলোতে পাঠক হিসেবে হয়তো বা কখনও ভেবেছেন, “আজ হাতের লেখা ভালো নয় বলে…”  

ইন্টারনেটের যুগে প্রেম-যুদ্ধে হাতের লেখার প্রয়োজন নেই বলা চলে। তবে ‘হাতের লেখা’ থেকে আমরা এখও মুক্তি পাইনি। কেননা, শিক্ষাজীবন হাতের লেখার সাথে এমনই সম্পৃক্ত একটি অংশ। 

আমাদের দেশে হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য একেবারে ছোট থেকেই বেশ গুরুত্বারোপ করা হয়। শিক্ষার্থীদের বাজে হাতের লেখা নিয়ে অনেকেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কৌতুকপূর্ণ মন্তব্যের শিকার হয়েছে। পাশাপাশি কাটাছেড়ার কারণে হয়তো বেশ কয়েকবার অসংলগ্ন মার্কিং-এর সম্মুখীনও হয়েছে।

স্কুল জীবনে সাতটি সৃজনশীল লেখার চাপের মধ্য দিয়ে কম সময়ে দ্রুত পৃষ্ঠা পূরণের যে প্রবণতা তা হয়তো স্কুল-জীবন পেরিয়েও অনেকে ভুলতে পারেননি। স্কুল-কলেজ জীবন শেষে সিনিয়রদের কথা শুনে হয়তো ভেবেছেন ভার্সিটি জীবনে হাতের লেখার কোনো গুরুত্ব নেই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তার সত্যতা পেয়েছেন কি? 

ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস-এর শিক্ষার্থী সাজিয়া কালাম সিনথিয়া জানান, “ভালো মার্কের জন্য হাতের লেখা বোধগম্য হলেই যথেষ্ট। সত্যি বলতে আমার নিজের হাতের লেখা তেমন সুন্দর না, তবে দ্রুত ও স্পষ্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছ থেকেও হাতের লেখা নিয়ে কোনো ভিন্ন আচরণ করতে দেখিনি।“ 

তার মতে, পরীক্ষায় অল্প সময়ে অনেক বেশি লেখার দরকার হয় তাই হাতের লেখার সৌন্দর্য ধরে রাখাটা সম্ভব হয় না। তাই ফ্যাকাল্টি অবশ্যই এমন বিষয়ে ছাড় দিবে। 

যদিও হাতের লেখা কম কিংবা বেশি মার্কিং-এ সরাসরি প্রভাব ফেলে না তবুও লেখার ধরন হিসেবে হাতের লেখা কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলে বলে মনে করেন প্রাইম ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আরিফা সুলতানা। 

তিনি জানান, “হাতের লেখা সুন্দর অসুন্দরের চেয়ে আলোচনাটা হওয়া উচিত স্পষ্টতা কিংবা অস্পষ্টতার। হাতের লেখা খুব একটা ভালো না হলে অর্থাৎ পড়তে যদি একটু হলেও অসুবিধা সৃষ্টি করে তবে যিনি খাতা দেখবেন তিনি একটু অবহেলা করে পুরো খাতার সারমর্ম আন্দাজ করে নম্বর বসিয়ে দিতে পারেন। তাই হাতের লেখার দিকে কিছুটা মনোযোগ অবশ্যই দেওয়া উচিত।“ 

সাধারণত তত্ত্বমূলক বিষয় ও বিভাগসমূহে লেখার ধরন, সাজানো ও প্রকাশের বিষয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ যোগাযোগ এবং সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী ফাইরুজ আনিকা বর্ষা জানান, “আমরা আসলে আমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরকে ভুল বুঝে থাকি। অনেক লেখার পরও আমরা মনে করি হাতের লেখা ভালো না হওয়ায় হয়তো আমরা কিছুটা মার্ক কম পেয়েছি। কিন্তু বেশি লেখার মানেই যে প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেয়া না, তা আমাদের বুঝতে হবে। তত্ত্বমূলক বিষয়ের পরীক্ষায় সাধারণত অকৃতকার্য তথা ফেইল হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু ভালো নম্বর পেতে হলে বেগটা বেশিই পেতে হবে স্বাভাবিক। তাই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর, প্রশ্নের উদ্দেশ্য ভালোভাবে বোঝা ও মোটামুটি স্পষ্ট হাতের লেখা বেশ ভালো মার্কই এনে দিতে সক্ষম।”

বিশ্ববিদ্যালয় পরিসরে ভালো নম্বরের জন্য হাতের লেখার থেকে উত্তরপত্রে শিক্ষার্থীর যুক্তিখন্ডন বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন ইসরাত জাহান প্রমি। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে আছেন। তিনি বলেন, "যুক্তিখন্ডনের বিষয়টি এনালিটিক্যাল বা বিশ্লেষণধর্মী উপস্থাপন হলে অবশ্যই ভালো নম্বর নিয়ে আসতে পারে। তবে অবশ্যই এখানে খাতায় লেখার উপস্থাপন বড় ভূমিকা পালন করে। পরীক্ষক যখন খাতায় দেখবেন তখন দেখার সাথে প্রশান্তিও গুরুত্বপূর্ণ। খাতায় মূল লেখার বিষয়াদির সাথে এর উপস্থাপন ও হাতের লেখা সুন্দর হলে পরীক্ষকের মনস্তত্ত্বে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে।"      

হাতের লেখা যেমনই হোক, পরীক্ষায় ভালো ফলাফল কে না চায়। আবার বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে ফলাফলও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই সিজিপিএ যেন না কমে এর জন্য উত্তরের পাশাপাশি হাতের লেখার উপর গুরুত্ব দেয়া যেতেই পারে।  

[email protected]

সর্বশেষ খবর