ভর্তুকির অবসান দরকার

রিপোর্ট

প্রকাশ :

সংশোধিত :

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিপি) সঙ্গে এক বৈঠকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমফ) প্রতিনিধিরা বিদ্যুতের দাম বাড়ানো এবং সরকারি ভতুর্কি প্রত্যাহারের পরামর্শ দিয়েছেন। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ আইএমফের কাছ থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ সহায়তা গ্রহণ করার পর  সরকার কয়েক ধাপে বিদ্যুৎের দাম বাড়িয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাসে আন্তর্জাতিক এ দাতা সংস্থার দেওয়া পরামর্শ মোতাবেক,  বিগত সরকার বছরে চারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো এবং পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে দেওয়া সকল ভর্তুকি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ভর্তুকি দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বোঝা, যা যে কোনও মূল্যে বন্ধ করা প্রয়োজন। কনজ্যিউমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) মনে করে, বিগত সরকারের সময় বারংবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণ ছিল বিদ্যুৎ খাতের চলমান দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনাকে টিকিয়ে রাখা।

বিগত আর্থিক বছরে বিদ্যুৎ খাতে সরকারি ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ৩৫০ বিলিয়ন টাকা এবং গ্যাস খাতে এর পরিমাণ ছিল ৬৫ বিলিয়ন টাকা। চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরে, বিদ্যুৎ খাতের জন্য বরাদ্দকৃত ভর্তুকির পরিমাণ ৩৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়িত হয় রেন্টালভিত্তিক বিদ্যুৎ প্লান্ট পরিচালন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের জন্য। প্রকৃতপক্ষে, এটি বিদ্যুৎ খাত ব্যবস্থাপনার একটি বাজে পদ্ধতি যেখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা উচিত এবং বিদ্যুৎ খাতকে এমনভাবে পুনর্গঠন করা প্রয়োজন, যাতে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অর্থ খরচ ছাড়াই বিদ্যুৎ খাত নিজেই নিজের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। বর্তমান সরকারের উচিত বিদ্যুৎ খাতে সংঘটিত দুর্নীতি ও অনিয়মকে আমলে নেয়া। এর মাধ্যমে গ্রাহকরা বিদ্যুতের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির যে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা তা থেকে মুক্তি পাবে একই সময়ে সরকারও বিদ্যুৎ খাতে অসহনীয় মাত্রায় ব্যয়িত ভর্তুকির বোঝা থেকে বাঁচবে। বর্তমানে, বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকির বোঝা, যা সরকারের উপর এসে বর্তেছে, তা থেকে মুক্তি পেতে হবে। আইএমএফ তাদের প্রতিশ্রুত ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের শর্ত হিসাবে বিদ্যুতের দামের বিষয়টি উল্লেখ করেছে এবং বাংলাদেশকে নতুন করে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণসহায়তা দিচ্ছে, যার জন্য বিগত সরকারের অনুরোধ করেছিল।

বর্তমানে আইএমএফ তাদের তৃতীয় মূল্যায়ন মিশন শুরু করেছে এবং ঋণের চর্তুথ কিস্তি প্রদানের পূর্বে ঋণ কর্মসূচির শর্তাবলী নির্ধারণ করেছে। তারা ঋণ বিতরণের আগে বাংলাদেশের জন্য সাতটি শর্ত নির্ধারণ করেছে। আইএমএফের শর্তাগুলো সঠিকভাবে পূরণ না হওয়ায় চলতি বছরের জুন মাসে ৩ দশমিক ৬৯২ ট্রিলিয়ন অর্থ পাওয়ার কথা থাকলেও তারা ২৫৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন অর্থ পেয়েছে। যাইহোক, আইএমএফের কল্যাণে সরকার এ দাতা সংস্থার নেট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ বিষয়ক শর্তাবলী পূরণ করতে পেরেছে। বিগত সরকারের অনুরোধে বিভিন্ন দাতা সংস্থা ঋণ প্রদানের শর্তাবলী নমনীয় করেছিল।  তারপরও পুনঃমূল্যায়নকৃত বর্তমান ঋণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগে নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সকল প্রতিকূলতার বিপরীতে এটা আশা করা যায়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটা টেকসই অর্থনীতি উপহার দিবে যেখানে কোনো সরকারি ভর্তুকি বরাদ্দের প্রয়োজন হবেনা।

সর্বশেষ খবর