স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমকে জোরালো করতে হবে

ফাইল ছবি।
ফাইল ছবি।

প্রকাশ :

সংশোধিত :

২০১৬ সালে প্রথম মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ হিসাবে বিকাশের প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশে স্টার্টআপ বিপ্লবের পথকে তরান্বিত করেছিল। ক্রমশই বাংলাদশে স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোর সংখ্যা বাড়ছে এবং এরা গ্রাহকদেরকে বহুবিধ সেবা প্রদান করছে, যেমন ই- কমার্স, ফিন্যান্স টেকনোলজি, এডুকেশন টেকনোলজি, ভ্রমণ টেকনোলজি, লজিস্টিকস, সফটওয়্যার, ইত্যাদি। এই সেবাগুলো আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অল্প সময়ের মধ্যেই স্টার্টআপ খাত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে এবং এটি  চাকুরির সুযোগ তৈরি, উদ্ভাবন ও দেশের মানুষের বিভিন্ন স্থানীয় সমস্যা সমাধানের একটা কার্যকরী প্লাটফর্ম হিসাবে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিছু স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির সাথে যৌথভাবে তাদের নিজেদের কাজ সম্পাদন করে যাচ্ছে এবং দেশের অর্থনীতিতে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ছে। এতকিছুর পরও যদি জিডিপি অনুপাতে স্টার্টআপ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ও অবদানকে বিশ্লেষণ করা হয়, তাহলে বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী রাষ্ট্র যেম ভারত, চীন, সিঙ্গাপুর ও পাকিস্তানের থেকে এখনও পিছিয়ে। 

বাংলাদেশে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক যে প্রতিষ্ঠানগুলো স্টার্টআপ খাতে ব্যবসায় পরিচালনা করেছে তাদের বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়াদি সম্পর্কে গত বছরের নভেম্বরে  লাইট ক্যাসল পার্টনার্স নামের একটি স্থানীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, প্রকৃতপক্ষে, ২০১৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের স্টার্টআপ খাতে স্বস্তিদায়ক পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে। এর মোট পরিমাণ ১১ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকার উপরে। চমকপ্রদভাবে, এই মোট বিনিয়োগের ৯২ শতাংশই সম্পাদিত হয়েছে বিদেশিদের দ্বারা। বিগত ২০২১-২২ সালে এই খাতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ  বিনিয়োগ হয়েছে। এর পেছনে সেইসময়ের করোনা প্রাদুর্ভাবের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। সেই সময়ে বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্বের গ্রাহকদের আর্থিক কার্য সম্পাদনে অনলাইনের উপর নির্ভরতা বেড়েছিল। 

বাংলাদেশে এই বিদেশি বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী ছিল একটি একক স্টার্টআপ হাউস, যেটি প্রকৃতপক্ষে দেশের স্টার্টআপ খাত ট্রেন্ডসেটার ছিল। উদাহরণস্বরূপ, জাপান-ভিত্তিক একটি প্রযুক্তি-কেন্দ্রিক বহুজাতিক বিনিয়োগ সংস্থা, সফট ব্যাংক গ্রুপ কর্পোরেশন, ওই স্থানীয় স্টার্টআপ হাউসে বিনিয়োগ করেছে।

ফিনটেক খাতের ওই একই প্রতিষ্ঠান ২০১৮ সালে আরেকটি বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, অ্যান্ট ফিনান্সিয়াল থেকেও যথেষ্ট বিনিয়োগ আকর্ষণ করে এবং এভাবে দেশের প্রথম ইউনিকর্ন (১.০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি মূল্যের একটি স্টার্টআপ) হয়ে ওঠে। নিঃসন্দেহে, প্রযুক্তি খাতে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের উদীয়মান স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে বলে এই উন্নয়ন হয়েছে। সেক্ষেত্রে, মুষ্টিমেয় কয়েকটি স্টার্টআপ কোম্পানির ব্যতিক্রমী পারফরম্যান্স নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে, একই সাথে, এটি এই সত্যটিও তুলে ধরে যে পুরো খাতের প্রবৃদ্ধি সমান হয়নি। তাই, যদি এই খাতে আরও অনেক সংখ্যক অন্য প্রতিষ্ঠান একই রকম মর্যাদার আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আনতে পারত তবে এটি আরও আশাব্যাঞ্জক হত।

২০২১ সালে, উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানটি ছাড়া পুরো স্টার্টআপ খাতে মোট ৪৩ কোটি ৪৮ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ এসেছে। এজন্য একটি সুষ্ঠু স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার জন্য, সরকারের পক্ষ থেকে একটি সহায়ক ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন, যাতে এই ক্ষেত্রের অন্যান্য অপারেটররাও সাফল্যগুলো অর্জন করতে পারে। এছাড়াও, স্টার্টআপ ব্যবসাটি একটি বিশেষ ধরনের পরিবেশে (যেমন করোনাভাইরাস-প্রভাবিত বছরগুলিতে) সমৃদ্ধ হয়েছিল তাও খুব একটা অনুপ্রেরণামূলক নয়। পরবর্তী বছরগুলোতে, এই ধারা ধরে রাখা যায়নি। কারণ যাই হোক না কেন, ২০২৩ সাল থেকে এই খাতে বিনিয়োগ কমেছে। ২০২৪ সালে, এই খাতে ৩ কোটি ৪৭ লাখ মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ এসেছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাসের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশি ডলারের তুলনায় মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধি, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধসহ যুদ্ধবিগ্রহ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ইত্যাদি। এছাড়াও, স্টার্টআপ খাতে বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য কর, আমলাতান্ত্রিক বাধা, অবকাঠামোগত অপ্রতুলতা, কর ব্যবস্থা ইত্যাদির মতো বিষয়গুলোর উন্নতি করতে হবে। পরিশেষে বলতে চাই, স্টার্টআপ খাতের বিকাশে একটি নীতি কাঠামো দেওয়া উচিত।

সর্বশেষ খবর