সম্ভাবনা দেখাচ্ছে বিকল্প জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ প্রস্তাব

রিপোর্ট

প্রকাশ :

সংশোধিত :

দ্য সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) সম্প্রতি তাদের প্রকাশিত একটি প্রস্তাবনায় বাংলাদেশের জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণে আন্তর্জাতিক মানসম্মত আর্টিফিশ্যাল নিউট্রাল নেটওয়ার্ক (এএনএন) মডেল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে। যদি সত্যিই এই মডেলটি কার্যকর ও বাস্তবায়ন হয়, তাহলে জ্বালানি খরচ ১৫ শতাংশ কমে আসবে। কেননা এই মডেলটি দাম নির্ধারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ভোক্তাদের যুক্ত করবে এবং তাদের মতামত নিবে ফলে জ্বালানি খাতের চুরি ও দুর্নীতি কমে আসবে এবং সরবরাহ লাইনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যাবে।

তারা তাদের প্রস্তাবনার নাম দিয়েছে ‘বাজার-ভিত্তিক জ্বালানি মূল্য নির্ধারণ: সরকারি উদ্যোগ এবং সম্ভাব্য সংশোধন’। তাদের প্রস্তাবনায় তারা মূলত আমাদের দেশে বর্তমানে প্রচলিত জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় দাম নির্ধারণ পদ্ধতির নানাবিধ ত্রুটির দিক তুলে ধরেছেন। চলতি বছরের মার্চ থেকে চালু হওয়া বর্তমান পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয় । এএনএন মডেল দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পদ্ধতির ব্যবহার নিশ্চিত করে। পাশাপাশি এটি গ্রাহকের ক্রয়ক্ষমতার দিকটিকে মূল্যায়ন করে এবং দাম নির্ধারণে এটিকে গুরুত্বে রাখে।

সিপিডি তাদের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) সীমাবদ্ধতার বিষয়টিও উল্লেখ করেছে। বিপিসি ২০১৫ সাল থেকে কোনো ধরনের সরকারি ভর্তুকি গ্রহণ করে না। কেননা তাদের আয়ের একমাত্র উৎস হলো জনগণ। ফলে তারা সেবাখাতে জনগণের ওপর অতিরিক্ত মূল্য আরোপ করে, যা তাদের মুনাফার অংককে বিশাল করে। এই কারণে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সকল ধরনের ব্যয় জনগণের ওপর বর্তায়। বিগত সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠানগুলো এভাবেই খরচ নির্বাহ করত। এতে করে ভোক্তাদের স্বার্থ বরাবরই উপেক্ষিত হতো এবং তাদের পুঁজি করে প্রতিষ্ঠানগুলো বড় অংকের লাভ অর্জন করত। কিন্তু সময়ে পরিবর্তন এসেছে। যেহেতু বিপিসি এতোদিন সরকারি ভর্তুকি ছাড়াই বিশাল অংকের অর্থ উপার্জন করেছে, তাই এই অর্থকে জনগণের প্রয়োজনে কাজে লাগানোর সময় এসেছে। পাশাপাশি বিগত তিন বছরে অসহনীয় দাম বাড়ার ফলে যে লোকসান হয়েছে তাও কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি।

সিপিডি তাদের প্রতিবেদনে তেল ও গ্যাসের দাম নির্ধারণে আন্তর্জাতিক পদ্ধতি অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিএআরসি) পুনরুজ্জীবিত করার উপরও জোর দেওয়া হয়েছে। অতীতে বিএআরসি বিভিন্ন অংশীজনকে আমন্ত্রণ জানাতো, যেখানে নীতিনির্ধারক ও রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন এবং তারা তাদের দাবির পক্ষে জোরালো যুক্তি তুলে ধরেন। এই পদ্ধতির মধ্য দিয়ে কিছুটা হলেও জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায়।

যদি বিপিসির ধারণসক্ষতা বাড়তে থাকে তাহলে দাম ধাপে ধাপে কমানো যেতে পারে। দাম নির্ধারণের যে সামগ্রিক প্রক্রিয়া যা জনগণের চাহিদা ও আগ্রহকে প্রতিনিধিত্ব করে তা জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করতে হবে। যেহেতু জ্বালানির ওপর আমাদের কৃষিখাত অনেকাংশে নির্ভরশীল তাই জ্বালানির দাম আমাদের কৃষি খাতের উৎপাদনশীলতার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। যাদের দুর্নীতি বা চুরি করার উদ্দেশ্য থাকে এমন পথভ্রষ্ট অংশীজনেরা এ বিষয়টিকে অনেকসময় মূল্যায়ন  করে না। ফলে সামগ্রিক ক্ষতিসাধন হয়। আর এগুলোই মূলত প্রাসঙ্গিক বিষয় যা জ্বালানি খাতকে লোকসানের মুখে ফেলে এবং এর খেসারত জনগণকে দিতে হয়। যতক্ষণ অন্তরবর্তী সরকারের বিদ্যুৎ,খনিজ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় এ সকল বিষয়কে আমলে না নিবে এবং সমাধানে উদ্যোগী হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ভোক্তাদের মনে স্বস্তি ফিরবে না।

সর্বশেষ খবর