ভর্তুকি-প্রণোদনা খাতে ব্যয় সংকোচনের সিদ্ধান্ত

প্রকাশ :

সংশোধিত :

নতুন বাজেট প্রস্তুতির সময় অন্তর্বর্তী সরকার দেশীয় ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বাস্তবতার চাপে দুই প্রান্ত সামলাতে গিয়ে ভর্তুকি ও প্রণোদনার খাতে ব্যয় সংকোচন করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে । কর্মকর্তারা জানান, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের জন্য তুলনামূলক ছোট পরিমাণ ব্যয় নির্ধারণের পরিকল্পনা চলছে, যার ঘোষণা আসবে আগামী ২ জুন। ফলে রপ্তানিকারকরা আগের মতোই রপ্তানি-প্রণোদনায় কিছুটা কাটছাঁটের সম্মুখীন হতে পারেন।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনার জন্য মোট বরাদ্দ ছিল ১ দশমিক ০৩ ট্রিলিয়ন টাকা, যা মোট পরিচালন বাজেটের (৫ দশমিক ১৫৫ ট্রিলিয়ন টাকা) ২০ শতাংশ।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আগামী বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনার খাতে প্রায় একই পরিমাণ বরাদ্দ রাখা হতে পারে, যদিও উন্নয়ন সহযোগী আইএমএফ ভর্তুকি কমানোর জন্য সরকারকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে।

তারা আরও জানান, কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয় ভর্তুকির বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানালেও, এ ক্ষেত্রে বরাদ্দ বৃদ্ধির কোনো সম্ভাবনা নেই। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটে ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ ছিল ৭১০ বিলিয়ন টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে বাড়িয়ে ৯০০ বিলিয়ন টাকা করা হয়।

সূত্র মতে, আগামী বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বরাদ্দ বাড়বে না; বরং আইএমএফ প্রতিনিধিদলকে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কিছুটা কমানো হতে পারে।

কৃষি মন্ত্রণালয় আগামী অর্থবছরের বাজেটে ডলার মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশেষ করে সার ক্রয়ের ব্যয় মেটাতে ২৫০ বিলিয়ন টাকা ভর্তুকির দাবি করেছে, যেখানে চলতি বাজেটে কৃষি ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১৭০ বিলিয়ন টাকা।

তবে অর্থ বিভাগ জানিয়েছে, আসন্ন বাজেটে কৃষি খাতে ভর্তুকির বরাদ্দ বাড়ানোর সম্ভাবনা খুবই কম।বাজেট প্রস্তুতের সঙ্গে যুক্ত এক সিনিয়র অর্থ কর্মকর্তা বলেন, বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনা ব্যয় বাড়ানো না-হওয়ার বিষয়ে আইএমএফের পক্ষ থেকে প্রচণ্ড চাপ রয়েছে।

"রাজস্ব আয়ের প্রবণতাও বাজেটের ব্যয় বৃদ্ধির সুযোগ দিচ্ছে না, তাই ভর্তুকি ও প্রণোদনার বরাদ্দ বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই," বলেন এক অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা।

আরেকজন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা জানান, সরকার আগামী অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনার জন্য চলতি বাজেটের সমান বরাদ্দ রাখার পরিকল্পনা করলেও, আগামী বছরের সংশোধিত বাজেটে অতিরিক্ত বরাদ্দের প্রয়োজন হতে পারে।

তবে তিনি বলেন, রপ্তানিমুখী খাতের জন্য প্রণোদনার ব্যয় আগামী অর্থবছরে কমতে পারে, কারণ সরকার নগদ প্রণোদনা আরও কমানোর পরিকল্পনা করছে—বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের প্রস্তুতির কথা বিবেচনায় রেখে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম দিনেই সরকার বিভিন্ন পণ্যের জন্য নগদ প্রণোদনা হার কমিয়ে ০ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করেছিল, যেখানে আগের বছর তা ছিল ১ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ। এর আগেও কিছু পণ্যের জন্য নগদ প্রণোদনা ২০ শতাংশ পর্যন্ত ছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এম এম আকাশ 'দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস'কে বলেন, বরাদ্দ যদি একই থাকে বা কিছুটা কমে, তবে সরকারকে অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে, এই সিদ্ধান্তে কারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তিনি মনে করেন, কোনো অবস্থাতেই এমনভাবে ভর্তুকি কমানো উচিত নয় যাতে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। "যদি আমাদের ভর্তুকি দেওয়ার সক্ষমতা না থাকে অথবা ভর্তুকি কমাতে হয়, তাহলে তা শুরু করা উচিত সমাজের ধনী শ্রেণি থেকে", বলেন আকাশ।

সর্বশেষ খবর