ঋণ পরিশোধে বৈদেশিক সাহায্যের রেকর্ড পরিমাণ অংশ ব্যয়

প্রকাশ :
সংশোধিত :

বাংলাদেশ ২০২৫ অর্থবছরে প্রাপ্ত বৈদেশিক সাহায্যের প্রায় অর্ধেকই বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যয় হয়েছে বলে জানা গেছে। সোমবার (২৮ জুলাই) সরকারি একাধিক সূত্র এ তথ্য জানায়।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সরকার ২০২৫ অর্থবছরে বৈদেশিক উৎস থেকে ৮ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার ঋণ গ্রহণ করলেও এর মধ্যে ৪ দশমিক শূণ্য ৮৭ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে।
এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে ঋণ পরিশোধের সর্বোচ্চ রেকর্ড।
এর আগে বিগত অর্থবছরে মাঝারি থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ৩ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার।
তিন বছর আগেও বাংলাদেশের ঋণ পরিষেবার ব্যয় ছিল ২০২৫ সালের তুলনায় অর্ধেক।
ইআরডির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকার ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ দশমিক শূণ্য ২ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করেছিল।
বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং জাপানসহ অন্যান্য বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক দাতাগোষ্ঠী ২০২৫ অর্থবছরে মোট ৮ দশমিক ৫১৮ বিলিয়ন ডলার সাহায্য প্রদান করেছে, যার মধ্যে ৮ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার ঋণ এবং ৪০৪ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন ডলার অনুদান।
ইআরডির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, গত সরকার বড় পরিসরে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ায় দেশের ঋণের বোঝা প্রতি বছর বেড়ে চলেছে।
তিনি বলেন, আগামী বছরগুলোতে আরও বেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে, কারণ বড় বড় প্রকল্পের নেওয়া ঋণের অব্যাহতি (গ্রেস পিরিয়ড) মেয়াদ শেষ হতে চলেছে।
ইআরডি জানায়, গত অর্থবছরে মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের বিপরীতে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার সুদ এবং ২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার আসল পরিশোধ করেছে সরকার।
২০২৪ অর্থবছরে সুদ পরিশোধ করা হয়েছিল ১ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার এবং আসল ২ দশমিক শূণ্য ২ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ সাধারণত বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা, এআইআইবি, চীন, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকসহ বিভিন্ন উন্নয়ন অংশীদারদের কাছ থেকে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে মধ্য থেকে দীর্ঘমেয়াদি সহজ শর্তের ঋণ গ্রহণ করে থাকে।
২০২৫ অর্থবছরে দাতারা মোট ৮ দশমিক ৫৬৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ ও অনুদান দিয়েছে, যা আগের অর্থবছর ২০২৪-এ প্রদত্ত ১০ দশমিক ২৮৩ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ১ দশমিক ৭১৫ বিলিয়ন ডলার কম।
এছাড়াও, গত অর্থবছরে বৈদেশিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতির পরিমাণও আগের বছরের তুলনায় কম ছিল।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৩২৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ ও অনুদান প্রতিশ্রুতি এসেছে, যা ২০২৪ অর্থবছরের তুলনায় ২ দশমিক ৪১৫ বিলিয়ন ডলার কম।
আরেকজন ইআরডি কর্মকর্তা জানান, ২০২৭ অর্থবছরে পুনরায় ঋণ পরিশোধের চাপ অনেক বেড়ে যাবে, কারণ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য রাশিয়ার দেওয়া ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারের ঋণের গ্রেস পিরিয়ড এর মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, শুধু রাশিয়ার ঋণ নয়, গত সরকার যে বাজেট সহায়তার নামে উচ্চ সুদে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছে, সেগুলোরও তখন থেকে পরিশোধ শুরু করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, “এই ঋণগুলোর মেয়াদ কম এবং গ্রেস পিরিয়ড মাত্র তিন থেকে পাঁচ বছর। তাই আগামী অর্থবছর থেকেই এই ঋণগুলোর কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে। এর ফলে প্রতিবছর ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বাড়তেই থাকবে।”

