রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের ঋণে সরকারের দায়বদ্ধতা বাড়ছে

প্রকাশ :
সংশোধিত :

সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানসমূহ (এসওই) দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের ক্ষেত্রে সরকারের জামানত প্রদানের মাধ্যমে সৃষ্ট দায়বদ্ধতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি জুন মাস পরবর্তী সময়ে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
নতুন বাজেট প্রস্তাবনায় দেখা গেছে, এই পরিমাণটি আগের বছরের ১ লাখ ১৭ হাজার ৯৪ কোটি টাকার তুলনায় ১ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে।
এসব জামানত ও প্রতিজামানত সরকারী নীতিমালা ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে নিযুক্ত বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক ও অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রদান করা হয়েছে।
এই বৃদ্ধিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে কারণ এই জামানতগুলো রাজস্ব ঝুঁকি বহন করে। যদি কোনো এসওই সময়মতো ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়, তাহলে সরকারকে সেই ঋণ পরিশোধে এগিয়ে আসতে হয় যা জাতীয় বাজেটে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি অব্যাহত থাকার প্রেক্ষাপটে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে দেশের প্রধান শহরগুলোতে তাদের কার্যক্রম বিস্তৃত করেছে। এর ফলে, টিসিবির জন্য সরকারের জামানতের পরিমাণ ১০০ শতাংশেরও বেশি বেড়ে ৪ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
এই জামানতগুলো মূলত এলটিআর (লোণ এগেইনস্ট ট্রাস্ট রিসিপ্ট) স্কিমের আওতায় সয়াবিন তেল, মসুর ডাল, চিনি, পেঁয়াজ, রাইস ব্র্যান তেল এবং খেজুর আমদানির জন্য প্রদান করা হয়েছে। একই সময়ে টিসিবির ভর্তুকিপ্রাপ্ত ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস) কার্যক্রমও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিদ্যুৎ খাত এখনো জামানতের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে। এই খাতে ১৮টি প্রকল্পের জন্য সরকার জামানত দিয়েছে, যদিও দায়বদ্ধতার পরিমাণ কিছুটা কমে ৫৩ হাজার ৭১ কোটি টাকায় নেমে এসেছে, যা আগামী জুন ২০২৫-পরবর্তী সময়ে প্রযোজ্য।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জামানতপ্রাপ্ত দায়বদ্ধতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে ১৭টি প্রকল্পের জন্য ৭ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকায় পৌঁছেছে , যা ক্ষতির মুখে থাকা এভিয়েশন খাতে মূলধনের ক্রমবর্ধমান চাহিদা প্রতিফলিত করে।
বাংলাদেশ সুগার অ্যান্ড ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিএসএফআইসি) সরকারের জামানতের উপর নির্ভরশীল তালিকায় রয়েছে, কারণ তাদের চিনির ব্যবসা মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল পরিচালনার জন্য তারা ১ হাজার ১১৭ কোটি টাকার বেশি কার্যকর মূলধন অর্জন করেছে।
বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন (বিজেএমসি) আগের বছরের মতোই দুটি কার্যকর মূলধনের ঋণ বজায় রেখেছে, যার পরিমাণ ৯০ কোটি টাকা। এই ঋণগুলো সোনালী ব্যাংক পিএলসি ও জনতা ব্যাংক পিএলসি থেকে নেওয়া হয়েছে এবং তাদের পাটকল পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।
দেশীয় ব্যাংকের পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক ঋণদাতা যেমন চায়নার এক্সিম ব্যাংক, ব্যাংক অব চায়না, আইসিবিসি, জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন (জেবিআইসি), এবং সিঙ্গাপুরের সুমিতোমো মিত্সুই ব্যাংকিং কর্পোরেশন (এসএমবিসি) সরকারের জামানতপ্রাপ্ত ঋণ প্রদান করছে।
জামানতের পরিমাণ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে, অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন যে এসওইগুলোর পারফরম্যান্স নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ ও ঝুঁকি মূল্যায়ন করা "অত্যন্ত জরুরি, যাতে রাজস্ব খাতে ধাক্কা এড়ানো যায় এবং সরকারী অর্থের স্থায়িত্ব বজায় রাখা যায়, কারণ অনেক ক্ষেত্রেই সরকারকে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে।"
jasimharoon@yahoo.com

