নতুন অর্থবছরে বিওপি ঘাটতি হ্রাসের সম্ভবনা
চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত ও প্রবাসী আয় মিলছে ভরসা

প্রকাশ :
সংশোধিত :

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাসেই বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্টস- বিওপি) কিছুটা স্বস্তি পেল বাংলাদেশ। চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত ও প্রবাসী আয়ের জোরালো প্রবাহ দেশের সামগ্রিক ঘাটতি কমাতে সহায়তা করেছে, যদিও আর্থিক হিসাবে বড় ধরনের ধস দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সোমবার প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ী, জুলাই মাসে সামগ্রিক ভারসাম্যপত্রে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা আগের বছরের একই মাসের ৬৯৩ মিলিয়ন ডলার ঘাটতির চেয়ে কম।
চলতি হিসাবে জুলাইয়ে ২৪৫ মিলিয়ন ডলারের উদ্বৃত্ত দেখা দিয়েছে, যেখানে ২০২৪ সালের একই মাসে ছিল ১৮১ মিলিয়ন ডলারের ঘাটতি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ অবস্থার পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং রেমিট্যান্সে প্রায় ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি।
জুলাইয়ে রপ্তানি বেড়েছে বছরওয়ারি ২৭ দশমিক ১ শতাংশ। ফলে এ মাসে আয় দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলারে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতে (আরএমজি) ২৪ দশমিক ৭ শতাংশ আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ ২৪ দশমিক ৭ শতাংশ ৯৬ বিলিয়ন ডলারে। অন্যদিকে আমদানি অপেক্ষাকৃত ধীরগতিতে ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলারে।
প্রবাসী আয় জুলাই মাসে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, মৌসুমি প্রভাবের পাশাপাশি হুন্ডি দমনে কঠোর ব্যবস্থা এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রণোদনা রেমিট্যান্স প্রবাহকে শক্তিশালী করেছে।
তবে আর্থিক হিসাবের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। জুলাইয়ে এ খাতে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭১৮ মিলিয়ন ডলারে, যেখানে আগের বছর একই সময়ে ছিল ২৬৩ মিলিয়ন ডলারের উদ্বৃত্ত। মূলত বাণিজ্য ঋণ ও স্বল্পমেয়াদি ঋণ পরিশোধ, এবং বহিঃঋণ পরিশোধে বড় অঙ্কের বহিঃপ্রবাহের কারণে এ ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
যদিও প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) দ্বিগুণ হয়ে ১০৪ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। তবে তা এখনো দেশের অর্থায়নের প্রয়োজন মেটাতে খুবই সামান্য। বৈদেশিক পোর্টফোলিও বিনিয়োগও স্থবির অবস্থায় রয়ে গেছে বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা ও অভ্যন্তরীণ আর্থিক খাতের শাসন-সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “চলতি হিসাবে উদ্বৃত্তের খবর ভালো হলেও আর্থিক হিসাবে পুঁজি বহিঃপ্রবাহ এবং ঋণ পরিশোধের চাপ উদ্বেগজনক।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, আমদানি প্রায় ২০ শতাংশ বাড়লেও চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত বজায় রয়েছে। এর মধ্যে বিশেষ করে মূলধনী পণ্য আমদানি ৪০ শতাংশের বেশি বেড়ে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
ড. হোসেন আরও বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে জুলাইয়ে মূলধনী পণ্যের দামে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি। তাই আমরা আশা করছি, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ইতিবাচক মোড় নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
jasimharoon@yahoo.com

