ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প: চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা ও সরকারের রূপান্তরমূলক পদক্ষেপ

প্রকাশ :

সংশোধিত :

বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্রে অবস্থান করছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাত। এটি শুধু কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এবং দারিদ্র্য হ্রাসে সহায়ক নয়, বরং জাতীয় জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। মোট শিল্প খাতের প্রায় আশি শতাংশই এসএমই খাতের আওতাভুক্ত, যা দেশের অর্থনৈতিক ভরকে সমৃদ্ধ করছে।

বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে কিছু ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকলেও, দেশীয় উৎপাদন, উদ্ভাবনী উদ্যোগ এবং নীতিগত সহায়তা এই খাতকে টেকসই করতে প্রধান ভূমিকা পালন করছে। বিশেষত তৈরি পোশাক, চামড়াজাত, হালকা প্রকৌশল, হস্তশিল্প এবং কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনকারী উদ্যোক্তারা বৈচিত্র্যময় পণ্যের মাধ্যমে দেশকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মানচিত্রে শক্ত অবস্থানে রেখেছে।

এসএমই খাত ইতোমধ্যেই বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ব্যাংক ঋণপ্রাপ্তির জটিলতা, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, আধুনিক প্রযুক্তির অভাব, পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে ঘাটতি এবং সীমিত বাজারজাতকরণ—এসবই উদ্যোক্তাদের অগ্রযাত্রাকে প্রভাবিত করছে। এছাড়া নারী উদ্যোক্তাদের জন্য পর্যাপ্ত সহায়ক পরিবেশের অভাব এই খাতের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বাধা দিচ্ছে।

এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার গত কয়েক বছরে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানির বৈচিত্র্য বাড়াতে চামড়াজাত, কৃষিজাত পণ্য, তথ্যপ্রযুক্তি এবং হস্তশিল্পে জোর দেওয়া হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ, প্রশিক্ষণ ও বিপণন সহায়তা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। সরকার বাজেটে এসএমই খাতের প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন, গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিশেষ বরাদ্দ রেখেছে, যাতে উদ্যোক্তারা প্রতিযোগিতামূলক উৎপাদন পদ্ধতি ব্যবহার করে বৈশ্বিক বাজারে টিকে থাকতে পারেন। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ক্ষুদ্রঋণ, প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধিমূলক উদ্যোগও জোরদার করা হয়েছে, যা গ্রামীণ অর্থনীতিতে তাদের ভূমিকা আরও দৃঢ় করবে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, দেশের এসএমই খাতের পূর্ণ সম্ভাবনা এখনও কাজে লাগানো যায়নি। সহজ শর্তে ঋণ থাকা সত্ত্বেও অনেকে তা ব্যবহার না করে বিদেশে অর্থ পাচারের মাধ্যমে ব্যবসায়িক ক্রিয়াশীলতা কমাচ্ছেন। এর ফলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। তাই সরকারের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপকে সমন্বিতভাবে কার্যকর করা অত্যন্ত জরুরি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক চাপ থাকা সত্ত্বেও সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দেশীয় উৎপাদনশীলতা, প্রযুক্তি ব্যবহার, মাননিয়ন্ত্রণ এবং নীতিগত সহায়তা নিশ্চিত করা। যদি সরকার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তারা একযোগে কাজ করে বৈচিত্র্যময় পণ্য উৎপাদন, প্রযুক্তিনির্ভর উৎপাদন ব্যবস্থা ও মানসম্মত পণ্য নিশ্চিত করেন, তবে এসএমই খাত দেশের অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে সক্ষম হবে।

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প অতীতেও নানা সংকট অতিক্রম করেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জকে একসাথে মোকাবিলা করে এবং আধুনিক প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনকে কাজে লাগিয়ে, এই খাত দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও শক্তিশালী অবস্থান নিশ্চিত করতে পারে।

সর্বশেষ খবর