রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় অর্থনীতি ঝুঁকিতে: বিশ্বব্যাংক

প্রকাশ :
সংশোধিত :

পুলিশ বাহিনী কার্যকর না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ করা সত্ত্বেও দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনিশ্চয়তা মধ্যেই থেকে যাবে। পাশাপাশি নীতিগত ধারাবাহিকতা ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্যের ফলে অনিশ্চয়তা ও ভবিষ্যতে রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ওয়াশিংটন সময় ২৩ এপ্রিল প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট ২০২৫’ প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও নানা সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী থাকবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে কঠোর মুদ্রানীতি বজায় রাখতে হতে পারে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। পাশাপাশি, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি ও শুল্ক যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধির হার কমে ৩ দশমিক ৩ শতাংশে নামতে পারে। সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ দুই-ই কমবে, কারণ উচ্চ সুদ ও নীতিগত অনিশ্চয়তার কারণে বেসরকারি বিনিয়োগে তেমন গতি আসবে না। সরকারি বিনিয়োগ কমলেও ভর্তুকি ও সুদ খরচ বাড়বে। এ অবস্থায় বিশ্বব্যাংক মনে করছে, প্রথমে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, সরকারি ও করপোরেট সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, রাজস্ব আদায় বাড়ানো এবং আর্থিক খাতের ভঙ্গুরতা দূর করা জরুরি।
রপ্তানি ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি বিষয়ে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ট্রাম্পের শুল্ক নীতির সরাসরি প্রভাব কম পড়লেও ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তা প্রকট হবে। এতে বাংলাদেশের রপ্তানি ১ দশমিক ৭ শতাংশ এবং প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ হারে কমতে পারে।
মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় বেশি। খাদ্যদ্রব্যের উচ্চমূল্য ও আমদানি খরচ বাড়ায় মূল্যস্ফীতির চাপ বজায় থাকবে। কঠোর মুদ্রানীতির মাধ্যমে তা ধীরে ধীরে কমানো সম্ভব হলেও পরিস্থিতি নির্ভর করবে মুদ্রানীতির কার্যকারিতার ওপর।
সরকার ব্যয় সংকোচন নীতি নিলেও রাজস্ব আয় কম থাকায় কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ করা কঠিন হবে। চলতি অর্থবছরে সরকারি ঋণ বাড়বে এবং ঋণের জিডিপির অনুপাত ১ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়ে ৩৭ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়াবে। বিদেশি ঋণের অনুপাতও কিছুটা বাড়বে।
প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত প্রধান গেইল মার্টিন বলেন, আর্থিক খাত সংস্কার, বাণিজ্য সহজীকরণ ও রাজস্ব আয় বাড়াতে সাহসী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়ন করা গেলে মধ্য মেয়াদে প্রবৃদ্ধি বাড়বে এবং মূল্যস্ফীতিও কমবে। তবে বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিস্থিতির অনিশ্চয়তার কারণে বহির্বাণিজ্য খাতে চাপ অব্যাহত থাকবে।
 
 
              For all latest news, follow The Financial Express Google News channel.