ঈদের ছুটিতে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট

প্রকাশ :

সংশোধিত :

ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটির কারণে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ও ডেলিভারিতে বিলম্ব ঘটেছে। ফলে, চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে ভয়াবহ কনটেইনার জট তৈরি হয়েছে। 

ছুটির মধ্যে বন্দর কার্যক্রম চলমান থাকলেও শ্রমিক সংকটের কারণে কনটেইনার লোডিং ও আনলোডিংয়ে বিলম্ব ঘটছে। এর পাশাপাশি, ২৮ মে থেকে ৫ জুন পর্যন্ত চট্টগ্রামে টানা ভারী বৃষ্টিপাত অপারেশনাল কার্যক্রমে আরও বিঘ্ন ঘটিয়েছে। এর ফলে প্রায় ৩৫ শতাংশ রপ্তানি চালানে সময়সূচি ব্যাহত হয়েছে।

সাধারণত প্রতিদিন ৫,০০০-এর বেশি আমদানিকৃত কনটেইনার জাহাজ থেকে আনলোড করা হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। কিন্তু বর্তমানে এ সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। কনটেইনার ডেলিভারি ৮০ শতাংশেরও বেশি কমে গেছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ) সূত্রে জানা যায়, ৫ জুন দিনে মোট ৪,১২২ টিইইউ (টিইইউ) কনটেইনার ডেলিভারি দেওয়া হয়, ৯,৭২০ টিইইউ হ্যান্ডলিং হয় এবং ৫,৪১১ টিইইউ আমদানিকৃত কনটেইনার জাহাজ থেকে খালাস করা হয়।

কিন্তু এরপর ৬ জুন ডেলিভারি কমে দাঁড়ায় ৩,৫০৫ টিইইউ-তে, এবং ৭, ৮, ৯, ১০ ও ১১ জুন এই সংখ্যা যথাক্রমে ৫২১, ০, ৪৩৭, ১৩৮২ ও ১২০০ টিইইউ হয়।

এছাড়া, আমদানিকৃত কনটেইনার খালাসের পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ৬ জুন ৫,৫৪৪ টিইইউ কনটেইনার খালাস করা হলেও, পরবর্তী দিনগুলোতে তা কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ২,৮৩৫, ৩০৮, ২,১১৩, ২,৩১১ ও ২,৪০০ টিইইউ।

সিপিএ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বন্দরের সকল কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং কনটেইনার ডেলিভারির জন্য বন্দর সম্পূর্ণ প্রস্তুত। চট্টগ্রাম বন্দর সর্বোচ্চ ৫৩,৫১৮ টিইইউ কনটেইনার ধারণ করতে পারে, যেখানে কার্যকরী সক্ষমতা ৩০,০০০ থেকে ৩৫,০০০ টিইইউ। ১১ জুন পর্যন্ত ইয়ার্ডে প্রায় ৩৯,০০০ টিইইউ কনটেইনার জমা ছিল।

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইসিডিএ) সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান বলেন, “দেশে ১৯টি অফ-ডক রয়েছে। ঈদের আগে রপ্তানি পণ্যের চাপ বেড়ে যাওয়ায় অনেক কনটেইনার অফ-ডক থেকে পাঠানো সম্ভব হয়নি।”

তিনি বলেন, “ঈদের দীর্ঘ ছুটির আগে রপ্তানিকারকরা রপ্তানি পণ্য আগেই আইসিডি-তে পাঠিয়ে দেন, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট কোনো জাহাজের জন্য তা নির্ধারিত ছিল না। এসব পণ্যের বেশিরভাগই ঈদের পর শিপমেন্টের জন্য নির্ধারিত হওয়ায় আইসিডি-গুলোতে কনটেইনারের সংখ্যা ২০,০০০ টিইইউ ছাড়িয়েছে, যা সাধারণ অবস্থায় থাকে প্রায় ৮,০০০ টিইইউ।”

তিনি আরও বলেন, ঈদের পর দীর্ঘ ছুটির কারণে শ্রমিক সংকট দেখা দেওয়ায় রপ্তানি পণ্যের আনলোডিং ও স্টাফিং কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

বিআইসিডিএর সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বলেন, “চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড) ও পতেঙ্গা এলাকায় অবস্থিত আইসিডি-গুলো অপারেশনাল সমস্যায় ভুগছে, যার প্রধান কারণ সল্টগোলা ক্রসিং থেকে সিইপিজেড পর্যন্ত রাস্তার করুণ অবস্থা।” তিনি বলেন, মাঝে মধ্যেই ভারী বৃষ্টিপাত আইসিডি-গুলোর কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে পর্যাপ্ত প্রি-স্ট্যাকিং ইয়ার্ড না থাকায় প্রায় ৮৫ শতাংশ রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার জাহাজের হুক-পয়েন্টে (অর্থাৎ সরাসরি জাহাজের পাশে) পাঠাতে হয়, ফলে জাহাজ ছাড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে অনেক কনটেইনার শিপমেন্টে বাদ পড়ছে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি ও বিজিএমইএর শিপিং ও বন্দর উপদেষ্টা এ এম মাহবুব চৌধুরী বলেন, “ঈদের ছুটি, ট্রাক ও লরির সংকট এবং শুল্ক বাড়ায় আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের পরিবহন বিঘ্নিত হয়েছে।”

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে যে পরিমাণ পণ্যের জট তৈরি হয়েছে, তা দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।”

সর্বশেষ খবর