ব্যাংক সংস্কারে ধীরগতি, ঝুঁকিতে আইএমএফ ঋণের ষষ্ঠ কিস্তি

প্রকাশ :
সংশোধিত :

বাংলাদেশ সরকারের ব্যাংক খাতে সংস্কার কার্যক্রমে ধীরগতির কারণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ডিসেম্বরের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির পরবর্তী কিস্তি ছাড় দিতে বিলম্ব করতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) এ তথ্য জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সম্প্রতি ওয়াশিংটনে আইএমএফ নির্বাহীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা জানান, ব্যাংক খাতে সংস্কারে বিলম্ব ও সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর প্রতি সরকারের ‘নিষ্ক্রিয়তা’ নিয়ে আইএমএফ সন্তুষ্ট নয়।
ওই কর্মকর্তা জানান, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)-এর মতো দুর্বল ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ধীরগতির কারণে ওয়াশিংটনভিত্তিক এই বৈশ্বিক সংস্থাটি অসন্তুষ প্রকাশ করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, যদিও বৈঠকে সরকার যে পাঁচটি বাণিজ্যিক ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে, তা প্রশংসা করেছে আইএমএফ, তবে বড় সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর বিষয়ে বিলম্ব নিয়ে তারা উদ্বেগ জানিয়েছে।
অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বার্ষিক সভায় অংশ নেয় এবং ওয়াশিংটন সদর দফতরে আইএমএফের এশিয়া-প্যাসিফিক বিভাগের প্রধানসহ কয়েকজন নির্বাহীর সঙ্গে বৈঠক করে।
এদিকে, বাংলাদেশের আর্থিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সংস্কার অগ্রগতি যাচাই করতে আইএমএফের একটি পরিদর্শন দল আজ বুধবার (২৯ অক্টোবর) ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। তারা দুই সপ্তাহের জন্য অবস্থান করে গত জুন পর্যন্ত হওয়া অগ্রগতি পর্যালোচনা করবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আইএমএফ ঋণের ষষ্ঠ কিস্তি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ছাড়ের কথা ছিল। তবে ব্যাংক খাতসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে সংস্কারের ঘাটতির কারণে কিস্তি ছাড়ে বিলম্ব হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এক মন্ত্রণালয় কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “আমরা আইএমএফ মিশনকে সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর বর্তমান অবস্থা ও সংস্কার উদ্যোগ সম্পর্কে বোঝানোর চেষ্টা করব। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ষষ্ঠ কিস্তি পাব।”
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে আইএমএফ বাংলাদেশকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন দেয়। চলতি বছরের জুনে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি একসঙ্গে ছাড়ার পাশাপাশি ছয় মাসের মেয়াদ বাড়িয়ে অতিরিক্ত ৮০০ মিলিয়ন ডলার যুক্ত করে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে।
ষষ্ঠ কিস্তি পেতে বাংলাদেশকে আইএমএফের ছয়টি ‘কোয়ান্টিটেটিভ পারফরম্যান্স ক্রাইটেরিয়া’ (কিউপিসি) পূরণ করতে হবে, যা সবচেয়ে কঠোর শর্ত। এর মধ্যে তিনটি নতুন শর্ত চলতি বছরের মে মাসে যুক্ত করা হয়।
বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের এক সদস্য বলেন, “আমরা আইএমএফকে জানিয়েছি পাঁচ ব্যাংকের একীভূতকরণ প্রক্রিয়া চলছে এবং আইবিবিএল ও ইউসিবিএলের অবস্থারও কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু আইএমএফ এখনো সন্তুষ্ট নয়।”
তিনি আরও জানান, আইবিবিএলে এক শেয়ারহোল্ডারের পক্ষ থেকে ২ হাজার কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগের বিষয়টিও জানানো হয়েছে, যা ব্যাংকের অবস্থার কিছুটা উন্নতি করেছে।
প্রাথমিকভাবে অনুমোদিত ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের কর্মসূচিতে এমন কোনো ঊর্ধ্বসীমা ছিল না।
 
 
              For all latest news, follow The Financial Express Google News channel.