বাংলাদেশে বিলাসবহুল গাড়ির মালিকদের অর্ধেকেরই কর রিটার্নে তথ্য গোপন

প্রকাশ :
সংশোধিত :

বাংলাদেশে বিলাসবহুল গাড়ির মালিকদের প্রায় অর্ধেকই কর রিটার্নে এসব যানবাহনের তথ্য গোপন করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, তারা নানা কৌশলে ফাঁকি দিচ্ছেন রাষ্ট্রীয় রাজস্ব।
এর মধ্যে বড় করদাতাদের মালিকানাধীন বিলাসবহুল গাড়ির প্রায় ৪০ শতাংশ কর ফাইলে অপ্রকাশিত রয়েছে। লার্জ ট্যাক্সপেয়ার্স ইউনিটের (এলটিইউ) আওতায় থাকা করদাতাদের ৩০৯টি গাড়ির মধ্যে ১২৩টির তথ্য কর রিটার্নে দেখানো হয়নি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) সাম্প্রতিক তদন্তে এই উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে। কর গোয়েন্দাদের সন্দেহ, এসব গাড়ি কেনার পেছনে অবৈধ অর্থ জড়িত রয়েছে। এ কারণে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান গাড়ির তথ্য গোপন করেছেন, তাদের কর সংক্রান্ত কাগজপত্র পুনঃরায় খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সিআইসির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নথিতে ৩ হাজার সিসির বেশি এবং প্রতিটির মূল্য ১ কোটি টাকার উপরে এমন ৫ হাজার ২৮৮ বিলাসবহুল গাড়ি নিবন্ধিত রয়েছে।
কর ফাঁকিদাতাদের চিহ্নিত করতে এ তদন্ত চালানো হয়। ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত গত পাঁচ করবর্ষের বিলাসবহুল গাড়ির মালিকদের তথ্য বিআরটিএ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
তথ্যে দেখা যায়, ১ হাজার ৩৩৯ বিলাসবহুল গাড়ির তথ্য মালিকরা কর রিটার্নে দেখাননি। বিপরীতে করদাতাদের ৪১টি আয়কর সার্কেলে ২ হাজার ৭১৯ গাড়ির তথ্য পাওয়া গেছে। তবে ৪০৯ জন গাড়ির মালিক কোনো কর রিটার্নই দাখিল করেননি। আরও ৪৪২ গাড়ির মালিকানা হস্তান্তরিত হয়েছে।
এ ছাড়া ১৮৮ গাড়ির কর-রিটার্ন বিষয়ক তথ্য পুনঃতদন্ত প্রয়োজন বলে জানিয়েছে সিআইসি। গত এক বছরেই নতুন করে ১৪৮ বিলাসবহুল গাড়ি কেনা হয়েছে, যেগুলোর তথ্য ২০২৫-২৬ অর্থবছরের রিটার্নে অন্তর্ভুক্ত করার কথা রয়েছে।
সিআইসি বিআরটিএ ও আয়কর রিটার্নের তথ্য মিলিয়ে দেখেছে করদাতারা আসলে কতগুলো বিলাসবহুল গাড়ি মালিকানায় রেখেছেন এবং সেগুলো রিটার্নে দেখানো হয়েছে কিনা। এনবিআরের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে এসব গোপনকারী মালিকদের করফাইল পুনরায় খোলার উদ্যোগ নিয়েছে মাঠপর্যায়ের কর অধিদপ্তর।
সিআইসির তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে রয়েছে—টয়োটা (৩ হাজার সিসির বেশি) ১,৩৩৫টি, বিএমডব্লিউ ১,২২৭টি, মার্সিডিজ ৭৭৪টি, জিপ ৬৯৫টি, ল্যান্ড রোভার ৫০৮টি, অডি ৪৮৬টি, রেঞ্জ রোভার ২১৯টি, পোর্শে ৮১টি, জাগুয়ার ৭১টি, বেন্টলি ২৯টি, রোলস রয়েস ২৫টি, ক্যাডিলাক ১৭টি, মাসেরাতি ও টেসলা ৫টি, ফেরারি ৪টি এবং ল্যাম্বরগিনি ১টি।
আয়কর আইনে বলা আছে, ব্যক্তিগত গাড়ির মালিকদের নিবন্ধন ও ফিটনেস নবায়নের সময় অগ্রিম কর দিতে হয়। ছোট গাড়ির (১৫০০ সিসি পর্যন্ত) জন্য এআইটি ধরা হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। তবে বিলাসবহুল গাড়ির ক্ষেত্রে এই অঙ্ক বেড়ে দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত।
কর কর্মকর্তারা বলছেন, গাড়ির মালিকরা ব্যক্তি হোক বা প্রতিষ্ঠান ফিটনেস সনদ নবায়নের সময় অগ্রিম কর দিয়েছেন কিনা, তা তদন্ত করা হচ্ছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তোফায়েল ইসলাম খান বলেন, করদাতাদের সম্পদ মালিকানা কর শনাক্তকরণ নম্বরের (টিআইএন) সঙ্গে সংযুক্ত করা জরুরি।
তিনি বলেন, “আমাদের এখন ইলেকট্রনিক টিআইএন ও জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। এগুলোকে আয়কর রিটার্নের সঙ্গে যুক্ত করলে করদাতারা সহজেই সব বড় সম্পদের তথ্য দিতে পারবেন।”
তার মতে, সার্বিক ডিজিটালাইজেশন ছাড়া কর আহরণে অর্ধেক-অধরা লক্ষ্যভিত্তিক উদ্যোগ ব্যর্থ হতে পারে, যেমনটা অতীতে হয়েছে।
doulotakter11@mail.com

