চীনের বিকল্প বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ, বাংলাদেশ-ভিয়েতনাম পিছিয়ে

প্রকাশ :
সংশোধিত :

যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড এবং খুচরা বিক্রেতারা চীনের বিকল্প হিসেবে সোর্সিং বৈচিত্র্য আনতে এশিয়ার অন্যান্য সরবরাহকারী দেশের দিকে ঝুঁকছে। তবে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনামের মতো ঐতিহ্যগত বিকল্পগুলোর প্রতি তাদের আগ্রহ তেমন বাড়েনি।
ট্যারিফ চাপ থাকা সত্ত্বেও, তারা এখনও উল্লেখযোগ্যভাবে চীনের উপর নির্ভরতা কমায়নি বলে সম্প্রতি একটি শীর্ষস্থানীয় সাপ্লাই চেইন কমপ্লায়েন্স সল্যুশন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কোয়ালিটি ইনস্পেকশন ম্যানেজমেন্ট (কিউআইএমএ)-এর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরিদর্শন এবং নিরীক্ষা চাহিদার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বছরের পর বছর এ প্রবণতা স্থিতিশীল রয়েছে।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড এবং খুচরা বিক্রেতারা ধীরে ধীরে চীনের বাইরে এশিয়ার অন্যান্য সরবরাহকারী দেশে অতিরিক্ত অর্ডার স্থানান্তর করছে, যা দীর্ঘমেয়াদি একটি পরিবর্তনের অংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “চীনের বিকল্প হিসেবে পরিচিত ভিয়েতনাম এবং বাংলাদেশের প্রতি এই প্রান্তিকে আগ্রহ বাড়েনি। উভয় দেশেই ইনস্পেকশন এবং অডিটের চাহিদা বছরে বছরে স্থির রয়েছে।”
ভিয়েতনামে, ট্রাম্পের রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ আরোপের আশঙ্কা এ আগ্রহ কমানোর কারণ হতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। আর বাংলাদেশের তুলার তৈরি পোশাকের উপর নির্ভরশীল উৎপাদন কাঠামো কিছু ক্রেতার জন্য সীমাবদ্ধতা তৈরি করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড এবং খুচরা বিক্রেতারা এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নতুন বাজার যেমন কম্বোডিয়া (৩৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি), ফিলিপাইন (৬২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি) এবং বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়ার দিকে ঝুঁকছে। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে ইন্দোনেশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের পরিদর্শন এবং অডিট চাহিদা টানা তিন প্রান্তিক ধরে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।
মোটভাবে, ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিক পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্পেকশন এবং অডিটের চাহিদা ৫৫ শতাংশ বেড়েছে। এই অঞ্চলের অংশীদারিত্ব প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের সোর্সিংয়ের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি ছিল।
তবে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সর্বশেষ ট্যারিফের ফলে ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা আগামী মাসগুলোতে এই প্রবণতা পাল্টে দিতে পারে।
এপ্রিলের শুরুতে ঘোষিত নতুন 'স্লেজহ্যামার' ধাঁচের ট্যারিফ বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থাকে এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক নেতা মাহমুদ হাসান খান বলেন, বাংলাদেশ মূলত বেসিক পোশাক তৈরি করে বলে অর্ডার খুব একটা কমবে না।
তবে ভারতের পাশাপাশি পাকিস্তান এবং ইন্দোনেশিয়া, যাদের শক্তিশালী ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ রয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য এবং ট্যারিফ যুদ্ধের সুযোগে চীনের সোর্সিং কমার ফলে এই অর্ডার পেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ভারত এবং পাকিস্তানের নিজস্ব তুলা ও সুতা রয়েছে এবং ভারত ও ইন্দোনেশিয়া ম্যানমেড ফাইবারের দিক থেকেও এগিয়ে, যা তাদের যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ডের জন্য বাংলাদেশ থেকে বেশি আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ওটেক্সার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের ১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ২৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি।
একই সময়ে, যুক্তরাষ্ট্রে চীন এবং ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানি ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং ১১ দশমিক ১৪ শতাংশ বেড়ে যথাক্রমে ২ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন এবং ২ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং পাকিস্তান যথাক্রমে ২৫ দশমিক ৭০ শতাংশ, ১৮ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং ২৩ দশমিক শূণ্য ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বলে ওটেক্সার তথ্য জানায়।
এ থেকে বোঝা যায়, ২০২৫ সালে ইন্দোনেশিয়া, ভারত, পাকিস্তান ও কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলোতে রপ্তানি বাড়ার প্রবণতা যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের সোর্সিং বৈচিত্র্য এবং প্রতিযোগিতামূলক মূল্য এবং ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে।
অন্যদিকে, চীনের ধীরগতির প্রবৃদ্ধি, যা অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকারকদের মতে আরও সঙ্কুচিত হতে পারে, বৈশ্বিক সোর্সিং কাঠামোতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই পরিবর্তনে বাণিজ্য নীতি, উৎপাদন খরচ এবং টেকসই উৎপাদনশীলতার মতো বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
রপ্তানিকারকরা বলেছেন, বাংলাদেশকে নিজের অভ্যন্তরীণ সমস্যা, যেমন বিদ্যুৎ সংকট, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, উচ্চ ব্যাংক সুদের হার এবং অন্যান্য জটিলতা সমাধান করতে হবে, যাতে বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিস্থিতির সম্ভাব্য অস্থিরতার মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখা যায়।
Munni_fe@yahoo.com

